নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল গত ১ জানুয়ারি থেকে নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় বরখাস্ত করা হয়েছে। গত বছরের আগস্টের শেষদিকে তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলি করা হয়। তার বদলে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। তবে গোলাম মোস্তফা রাসেল বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগেই পালিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
গোলাম মোস্তফা রাসেল নারায়ণগঞ্জে পদার্পন করেই গর্বভরে নিজের ছাত্রলীগের রাজনীতি করার পরিচয় দিয়েছিলেন সকলকে। বিএনপি সহ অপরাপর আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের সাথে করতেন নির্মম আচরণ। নারায়ণগঞ্জ শহরে অটোরিক্সা বিস্তার করতে দেয়ার অন্যতম কারিগর তিনি। শহরে অটোরিক্সা প্রবেশ বন্ধের জন্য একাধিকবার অনুরোধ করলেও তাতে তিনি কর্নপাত করতেন না। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান বৈঠক করে শহর থেকে অটোরিক্সা সরিয়ে নিতে বার বার তাগাদা দিলেও তা করেননি তিনি।
শুধু তাই নয়। অবৈধ ইজিবাইক প্রবেশে অবাধ সুযোগ করে দেয়ার অন্যতম কারিগর তিনি। গণমাধ্যম কর্মীরা অটোরিক্সার ভোগান্তি নিয়ে সংবাদ করতে গেলে তাদের অটোরিক্সা সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধও করেছেন তিনি। সেই থেকেই তাকে অটোরিক্সা বান্ধব পুলিশ বা অটো রাসেল উপাধি লাভ করেন লোকমুখে। আর পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরকে ইজিবাইকের নগরীতে পরিণত করে দেন।
গোলাম মোস্তফা রাসেল জেলায় দায়িত্ব পাওয়ার পরপরেই ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেন। এতে একাধিক আহত সহ যুবদল কর্মী শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। শাওনের লাশ আটকে রেখে তার ভাইয়ের সাক্ষর রেখে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন রাসেল। যুবদল কর্মী শাওনকে যুবলীগ কর্মী নাটক সাজানোর অন্যতম কারিগর তিনি। শুধু তাই নয়, নানাবিধ ভয় দেখিয়ে শাওনের পরিবারকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তোলেন। সেই শাওনের পরিবার ২ বছর পর নারায়ণগঞ্জের সাবেক ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ, এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেলকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। অক্টোবরে মামলা দায়েরের দুই মাস পরেই পলায়ন করে এই রাসেল।
পলাতক রাসেল বরখাস্ত হবার খবরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শাওন হত্যা সহ জুলাই আন্দোলনে একাধিক হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা রাসেল কিভাবে পালিয়ে গেলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেই সাথে প্রথমেই কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং কেন তাকে এতদিন বাইরে রাখা হয়েছে এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে রাসেল ইতোমধ্যে নিজের অপরাধের ভয়ে যে ভীত তা প্রমান করেছে। কিন্তু সরকার তার অতি উদারতা দেখিয়ে খুনিকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। যা শাওন সহ অসংখ্য নিহতের পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক।
রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে অত্যাচার করে যাওয়া রাসেলকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে তাকে বিচারের মুখোমুখী দাঁড় করাতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মত সে যদি বিদেশে পালিয়ে যায় তাহলে এর দায় বর্তমান সরকারকে নিতে হবে। আর যদি দেশে থাকে তাহলে দ্রুত তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কেবলমাত্র বরখাস্ত করে অসংখ্য অপরাধ থেকে তাকে নিস্তার দেওয়া যাবে না।
আপনার মতামত লিখুন :