নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি বিতর্কিত নেতা আতাউর রহমান মুকুল পদে পদে জনভোগান্তির কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দলের দুর্দিনে আওয়ামী দোসর জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমানের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখে নিজে টিকে থাকলেও বিএনপির ত্যাগীদের ক্ষেত্রে তার আচরণ ছিল হিংস্র। ৫ আগস্ট পরবর্তী অর্থাৎ বর্তমান বিএনপির সুদিনেও নানা রকমের কর্মকান্ডে দলের সুনাম ক্ষুন্ন করছে এই বহিস্কৃত নেতা। কখনো অন্যের উপর হামলা করিয়ে আবার কখনো নিজেই হামলার শিকার হয়ে সমালোচনার তুঙ্গে রাখছে জাতীয়বাদী দলকে।
সবশেষ রবিবার (২৯ জুন) নাসিক ২৭ নং ওয়ার্ডস্থ হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে টেন্ডার নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপি দলীয় অপর আরেকটি গ্রæপের কাছে বেধড়ক মারধরের শিকার হোন মুকুল। এই হামলায় তাকে বিবস্ত্র করা হয়। আর এই ঘটনার পরিবর্তে আবারও আলোচনায় এসেছেন তিনি।
ইতোমধ্যে এই হামলাকে পুঁজি করে দলের হাইকমান্ডের নজরে আসার প্রয়োজনে জনভোগান্তিও সৃষ্টি করেছেন। এতে তাকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জজুড়ে সমালোচনার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
৩০ জুন সোমবার মুকুলের কর্মীসমর্থকদের দ্বারা অতিব গুরুত্বপ‚র্ন ব্যস্ততম মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ করে মানুষের যাতায়াতে বিঘন্ম ঘটায়। এই কান্ডে বিএনপির প্রতি মানুষের আরও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বিকেলে আতাউর রহমান মুকুলের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুরে অংশের উভয় লেনে সড়ক বন্ধ করে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। এতে প্রায় একঘন্টা ব্যস্ততম সড়কের হাজার হাজার যানবাহন ও যাত্রীকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।
আতাউর রহমান মুকুল ইতিপূর্বে বন্দর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতিও ছিলেন। গত ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য এ কেএম সেলিম।ওসমানের বিভিন্ন রাজনৈতিক জনসভায় অংশগ্রহণ করার অভিযোগে আতাউর রহমান মুকুলকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ২৭ নং ওয়ার্ড হরিপুর এলাকায় অবস্থিত ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টি আই কাজটি ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে নিযুক্ত হন ফতুল্লা হাজীগঞ্জ এলাকার মেসার্স দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেন আলাউদ্দিন। তিনি জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা। তার বিরুদ্ধে এলাকাতে নানা অভিযোগ রয়েছে। মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে সাব ঠিকাদার হিসাবে কাজটি নিয়েছেন বন্দর উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। রোববার দুপুরে তিনি কাজের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যান।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কেন্দ্রের সামনে কয়েকজন ব্যক্তি আতাউর রহমান মুকুলকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছেন। তার পাঞ্জাবি প্যান্ট খুলে বিবস্ত্র করা হয়েছে। পরনে ঝুলন্ত ছেঁড়া ধরে এক ব্যক্তি তাকে টেনে হেঁচড়ে কোথাও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সময় পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে একটি অটো রিকশায় তুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।
এর আগে,২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছিল। সেসময় হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে মুকুলকে দায়ী করেন টিপু। এতে দেশব্যাপী সমালোচনা সৃষ্টি হয়। যা মামলার পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। জনগণের আস্থা অর্জনে গাফলতি হলে বিএনপির জন্য খারাপ সময় অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য সাধারণ মানুষের।
সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ করানোর বিষয়ে সাধারণ মানুষ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে বিতর্কিত করার জন্যে মুকুলদের মতো মানুষই যথেষ্ট। দলের হাইকমান্ড হতে বহিস্কৃার করা সত্বেও বিএনপির ব্যানারে এইসব কৃতকর্মে ভোটের বাতাস ঘুরে যাচ্ছে।
মুকুলের কৃতকর্মের দায় বিএনপির নয় বলে একাধিক বিএনপির সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন। নেতারা বলেন, মুকুল দলের কেউ নন। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের দলের সুনাম ক্ষুন্ন হবে এমন কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
বিক্ষোভ করিয়ে জনভোগান্তি সৃষ্টির বিষয়ের বক্তব্যের জন্যে ফোন দেওয়া হলে আতাউর রহমান মুকুল বলেন, মানুষের ভোগান্তি দেখছেন আমাকে যে মারধর করা হইছে এইটা আপানারা দেখেননি? আমার উপরে যে হামলা হয়েছে আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন? মানুষের উপরে দরদ দেখান। কি লিখছেন আমার নামে দেখছি তো। যা মন চায় লেখেন।
উল্লেখ এর আগে, ২০২৩ সালে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ বিএনপি থেকে আতাউর রহমান মুকুলকে বহিষ্কার করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :