গত দুই দিনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জে সাতজনের লাশ উদ্ধার করেছে। এতে নবজাতক, শিশু, নারী ও বৃদ্ধের লাশ উদ্ধারে বিস্মিত হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী। অন্যদিকে গণর্ধষণের দুইটি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ফতুল্লা ও বন্দরে দুইটি মামলা দায়ের করে ভূক্তভোগী পরিবার।
জানা যায়, শনিবার ১২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপ শহরের প্লট থেকে দেলোয়ার হোসেন (৪৫) নামের এক যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় মরদেহের পাশ থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলের এক নম্বর সেক্টরের একটি খালি প্লটের ভেতর থেকে যুবকের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত দেলোয়ার হোসেন কিশোরগঞ্জ সদর থানার শোলাকিয়া এলাকার আবু সাঈদের ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক(ওসি) লিয়াকত আলী জানান, সকালে ওই এলাকায় স্থানীয়রা মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়। মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে, রাতের যেকোনো সময় দুর্বৃত্তরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ওই যুবককে হত্যা করে এখানে ফেলে রেখে গেছে। মরদেহের পাশ থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের প্যান্টের পকেট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
একই দিনে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সিরাজুল ইসলাম (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কান্দারগাঁও এলাকায় মেঘনা শাখা নদীর পাশের বালুর মাঠে ঝোপের মধ্যে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিহত মেঘনা সংলগ্ন ঝাউচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি প্রায় ছয় দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উদ্ধার করেছে সোনারগাঁ থানা পুলিশ।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান জানান, মৃত ব্যক্তির শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত ব্যক্তি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, এবং তিনি সম্ভবত স্ট্রোক কিংবা অসুস্থ হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে যান। নিহত সিরাজুল ইসলামের মরদেহটি আজ সকালে উদ্ধার হলেও, তার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই পুলিশ তার সন্ধান চালাচ্ছিল। এখন পুলিশ এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে।
শনিবার ১২ এপ্রিল রূপগঞ্জে নবজাতক কন্যা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে রূপগঞ্জ পুলিশ। এদিন সকালে উপজেলার দাউদপুরের খৈসাইর এলাকার একটি পরিত্যাক্ত ভিটি থেকে কাপড়ে মোড়ানো নবজাতক শিশুরটির লাশ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী জানান, নবজাতক শিশুটির পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ। ধারনা করা হচ্ছে মরহেদ অন্য স্থান থেকে ঘাতকেরা ফেলে রেখে গেছে। লাশের ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার ১১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজিতে স্ত্রী ও শিশু সন্তান সহ তিনজনকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে মাটিচাপা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় লামিয়ার স্বামী আটক ইয়াছিন গ্রেপ্তার আরো তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপর দুই আসামি হলেন ইয়াছিনেন বাবা দুলাল মিয়া ও ছোট বোন শিমু।
গত ৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বড় বাড়ি এলাকার পোশাক শ্রমিক লামিয়া আক্তার, তার চার বছর বয়সের শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ ও লামিয়ার প্রতিবন্ধী বড় বোন স্বপ্না আক্তার। নিখোঁজের চারদিন পর বাসার পাশে রাস্তা খুঁড়ে মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় উদ্ধার হয় তিন জনের খন্ড বিখন্ড লাশ।
একই দিন নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের জেরে তিন দিন আগে ‘আত্মহত্যা’ করেন মিতা খাতুন আত্মহত্যা করেছেন। রাজশাহীর বাগমারায় প্রেমের সম্পর্কের জেরে পরিবারের অসম্মতিতে পালিয়ে বিয়ে করেন শাকিল হোসেন ও মিতা খাতুন। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অভিযোগ, পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে মিতাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে দেন শাকিল। এ ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ‘মারধরের ভয়ে’ স্ত্রীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গ্রামে না গিয়ে বাগমারা থানায় যান শাকিল। পরে তাকে হেফাজতে নিয়ে লাশ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
গণধর্ষণ : গত ১১ এপ্রিল শুক্রবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বন্দরে (১৬) বছরের এক কিশোরীকে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের শিকার কিশোরী অনলাইন ডেলিভারিম্যান বলে জানা গেছে। কিশোরীর মা বাদী হয়ে বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনাটি পুরান বন্দর চৌধুরীবাড়িস্থ জনৈক লক্ষি বাড়ি পিছনে ছাগল রাখার একচালা ঘরে। ভুক্তভোগী কিশোরীর মা জানান, তার মেয়ে অনলাইন ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করে। গত ১ এপ্রিল কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাত ১১ টার দিকে বন্দর চৌধুরী বাড়ি এলাকার কুতুবউদ্দিনের ছেলে টিপু সুলতান (২৬) একই এলাকার হাকিমের ছেলে সজিব হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুইজন মিলে নাসিম ওসমান মডেল স্কুল গেইটের সামনে থেকে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। পরে জনৈক লক্ষি বাড়ি পিছনে ছাগল রাখার একচালা ঘরে নিয়ে মুখ ও হাত পা বেঁধে জোর পূর্বক ভাবে ৪ জন ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় ।
এদিকে গত ৯ এপ্রিল ফতুল্লার গাবতলী এলাকায় কোলের শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণে অভিযোগ পাওয়া যায়। ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে গোটা রমজান মাস জুড়ে ধর্ষিতা ওই গৃহবধুকে বøাকমেইল করে একাধিকবার গণধর্ষণ করে। আবারো পূর্ণরায় ৯ এপ্রিল গৃহবধূকে ধর্ষণ করলে ওই গৃহবধূ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ঘটনাটি তার স্বামীকে জানতে পারে। ঘটনা জানা যায়, গাবতলী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন। বিগত রমজান শুরু হওয়ার আগে তার স্ত্রী (১৮) তার শিশু সন্তানকে নিয়ে ইসদাইর-গাবতলী লিংক রোড দিয়ে যাওয়ার সময় ইসদাইর বটতলা এলাকার আনোয়ারের ভাগিনা সজিব, গাবতলী মাজার এলাকার কাসেম মিয়ার ছেলে রাকিব ওরফে মাইন, শফিক মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া নয়ন এবং নজরুল সহ অজ্ঞাত আরো দুইজন জোরপূর্বক ধরে নিয়ে তার শিশু সন্তানকে কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষণকারীরা ধর্ষণের ভিডিও ধারন করে। এ সময় অপর এক নিরীহ ব্যক্তিকে ধরে এনে বø্যাকমেইল করে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা রেখে দেয় এবং বলে ওই ব্যক্তি যদি এই ঘটনা কাউকে জানায় তাহলে এই মেয়ের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক আছে বলে ফাঁসিয়ে দেবে। পরবর্তীতে গোটা রমজান মাস জুড়ে ওই ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে গৃহবূধকে আরো কয়েক দফা গণধর্ষণ করে।
আপনার মতামত লিখুন :