নারায়ণগঞ্জ শহরে গুলিতে রিয়া গোপ নামের ৭ বছরের শিশুর মৃত্যুর প্রায় ১ বছর পর মামলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এস আই আবু রায়হান বাদী হয়ে ১ জুলাই মামলাটি দায়ের করেন।
এতে অভিযোগ করা হয়, ১৯ জুলাই সাড়ে ৪টায় আওয়ামী লীগের দেড় শ হতে ২০০ জন অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারী আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত হয়ে মিছিলকারীদের উপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। ৬টা ২০ মিনিটে গুলশান হলের পেছনে ২৭ নয়ামাটি এলাকার দীপক কুমারের ৫ তলা বাড়ির ছাদে রিয়া গোপ ৭ খেলাধুলা করার সময়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহন হয়। তাকে প্রথমে ভিক্টোরিয়া ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ২৪ জুলাই মারা যান। রিয়া গোপের পরিবার বাদী হয়ে মামলা করবেন জানানোর পরে তারা করেনি। এ কারণেই পুলিশ মামলাটি দায়ের করে।
এদিকে মামলা না করা প্রসঙ্গে রিয়ার মা বিউটি ঘোষ বলেন, ‘মামলা করে কী হবে? কাদের নামে মামলা করবো? হত্যাকারী কে, আমরা জানি না। আমরা বিচার ছেড়ে দিয়েছি সৃষ্টিকর্তার উপর।”
জানা যায়, দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। দীপক স্থানীয় একটি রড-সিমেন্টের দোকানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। ২০১৯ সালে এই দম্পতির সংসারে আলো হয়ে আসে রিয়া। ২০২৪ সালে সে ভর্তি হয় স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, দুপুরের খাবারের পর খেলতে ছাদে গিয়েছিল রিয়া। তখন শহরের নিচে চলছিল উত্তপ্ত আন্দোলন। গোলাগুলির শব্দ শুনে রিয়াকে আনতে ছাদে যান তার বাবা। কিন্তু এর আগেই রিয়ার মাথার পেছনে গুলি লাগে। রিয়াকে তাৎক্ষণিক নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পর দুদিন সে বেঁচে ছিল। কিন্তু ২৪ জুলাই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়: গানশট ইনজুরি”।
রিয়ার মৃত্যু দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। অথচ আজও দায় স্বীকার করেনি কেউ। মামলাও হয়নি। ঘটনার দিন ছিল শুক্রবার, ১৯ জুলাই। জুমার নামাজের পর শহরের রাস্তায় ছিল না কোনো পুলিশি উপস্থিতি। এই ফাঁকেই মাঠে নামেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শত শত নেতাকর্মী, হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র। সেদিন শহরের ডিআইটি এলাকা থেকে নয়ামাটির দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে অগ্রসর হন তারা। পুলিশের অনুপস্থিতিতে বিরোধীদের প্রতিরোধ করতে নেমে পড়ে এই দল। ধারণা করা হয়, সেদিন তাদের গুলিতেই রিয়ার মৃত্যু হয়। পরে বিকেলে যখন গুলি শেষ হয়ে আসে, তখন সরে যান শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা।
আপনার মতামত লিখুন :