নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিএনপির অভ্যন্তরীন বিরোধ ও ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নেয়ার জেরে হত্যা করা হয় যুবদল নেতার ভাই মামুন ভূঁইয়াকে। ঘটনার এক মাস না পেরোতেই এবার বন্দরে বিএনপি নেতাদের অনুসারীদের অভ্যন্তরীন সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সহ দুজন নিহত হয়েছেন। একের পর এক হত্যাকান্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে গেলেও বিএনপির শীর্ষ নেতারা নীরব ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন।
গত শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ৩ ঘন্টার ব্যবধানে দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতাদের অনুসারীদের অভ্যন্তরীন বিরোধে নিহত হন বৃদ্ধ আব্দুল কুদ্দুস (৬০) এবং বন্দর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মেহেদী হাসান (৪২)। এই ঘটনায় যেমন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তেমনি প্রকাশ পেয়েছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের লাগামছাড়া হয়ে পড়ার চিত্র।
গত ১০ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন খোকাকে আটক করে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় তাকে ছাড়াতে ছুটে আসে জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম বাবু। এক পর্যায়ে এলোপাতারি গুলি ছুড়লে ব্যবসায়ী মামুন ভুঁইয়া গুলিবিদ্ধ হন। রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মামুন। নিহত মামুনের ভাই জানান, মামুন যুবদলের কর্মী ছিলেন। তিনি রূপগঞ্জের বিএনপির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুইয়ার অনুসারী ছিলেন। অন্যদিকে গুলি ছোঁড়া বাবু ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজি মনিরুজ্জামান বলয়ের অনুসারী।
দুই বলয়ের এমন বিরোধ এবং ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে নিজ দলের কর্মীকে খুন করা হলেও দল থেকে কেবল বহিস্কারাদেশ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। জাহেদুল ইসলাম বাবু এখনও পলাতক রয়েছে। ঘটনার মাত্র ১১ দিনের মাথায় ফের রাজনৈতিক সহিংসতায় খুন হয়েছে বন্দর থানা সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মেহেদী হাসান ও স্থানীয় চা দোকানি আব্দুল কুদ্দুস।
সূত্র বলছে, গত শুক্রবার থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিলো বন্দর এলাকায়। যার নেপথ্যে ছিলো সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা হান্নান সরকারের অনুসারীরা। শুক্রবারের ঘটনায় বন্দরজুড়ে উত্তেজনা তৈরী হলেও এসব অনুসারীদের নিবৃত করতে কোন ভুমিকাই নিতে দেখা যায়নি হান্নান সরকারকে। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলের শীর্ষ নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি আবুল কালামের রাজনীতি করে আসছেন হান্নান সরকার। সেদিক থেকে আবুল কালাম তার ভাই আতাউর রহমান মুকুল ও আবুল কালামের ছেলে আবুল কাউসার আশা অভিভাবক হিসেবে এই সহিংসতা নিবৃত করতে পারেননি। যার ফলে শনিবার দফায় দফায় সংঘর্ষের পরে দুটি তাজা প্রান হারায়। ঘটনার পর থেকে দেশজুরে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
জোড়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াত। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচার দাবী করেন তারা। এর আগেও রূপগঞ্জে মামুন ভুঁইয়া হত্যাকান্ড নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাত করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রূপগঞ্জে হত্যাকান্ড নিয়ে নীরব ছিলো জেলা বিএনপি। বন্দরের হত্যাকান্ড নিয়েও নীরব মহানগর বিএনপি। তাদের নীরবতা এই ধরনের সহিংসতাকে আরও বেশী এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। অথচ স্থানীয় নেতারা শক্ত হাতে তৃণমূলকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করলে বিশৃঙ্খলা অনেকটাই কমে আসা সম্ভব। এই স্থানে ব্যার্থ হবার কারনেই দিন দিন সংঘাত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে।
আপনার মতামত লিখুন :