২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন অতিবাহিত হয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কোন আয়োজন করা তো দূরে থাক, ঘর থেকে বের হবারও সাহস দেখায়নি। তবে ঠিক পুরোনো কায়দায় ২২ জুন রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়ে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর সেই গুজব বাস্তবায়ন হোক বা না হোক অগ্রিম সতর্কতার অংশ হিসেবে মাঠে ছিলো ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা।
২২ জুন রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, সকাল ৬ টায় শহরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করবে। সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের পেছনের সড়কে গিয়ে সমাপ্ত হবে। লোকসমাগম বেশী হলে মিছিল নিয়ে শহরের দুই নাম্বার রেলগেইট পেরিয়ে ডিআইটি মার্কেট পর্যন্ত যাবে তারা।তবে ২৩ জুন সকাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাউকেই রাস্তায় পাওয়া যায়নি। সকাল ৬ টা থেকে সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের অপেক্ষায় অবস্থান নেয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মহানগর ছাত্রদল নেতা আজিজুল ইসলাম রাজীবের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দেয় কলেজ রোডে। কিন্তু কাউকেই পাওয়া যায়নি।
প্রায় একই সময়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া স্বাধীনতা চত্তরে অবস্থান নেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। সেই সাথে যুক্ত হয় ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপির কিছু নেতাকর্মী। বেলা বাড়ার সাথে সাথে চাষাঢ়াতে অবস্থান নেয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও। পথসভা ও মিছিল করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করার প্রত্যয়ে রাজপথে অবস্থান নেন তারা।
সূত্র বলছে, রাজনৈতিক স্বার্থে জামায়াত, বিএনপি এবং এনসিপির মতপার্থক্য ও একে অপরের সমালোচনা করলেও আওয়ামী লীগ ঠেকানোর লক্ষ্যে রাজপথে ঠিকই অবস্থান নিয়েছেন একসাথে। এখানে ছিলো না কোন মতপার্থক্য কিংবা বিভেদ। প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ প্রতিহত করতে কাধে কাধ মিলিয়ে রাজপথে অবস্থান নেন। যা দেখে ভয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করার সাহস দেখাননি। দিনভর নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন কেটেছে মুখ লুকিয়ে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ফতুল্লায় আওয়ামী লীগের কর্মী অনুসারীরা ঝটিকা মিছিল করে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে। অধিকাংশ মিছিলই পালিত হয়েছে ভোরে কিংবা রাতের আধারে। যখন সাধারণ মানুষের উপস্থিতি থাকে না বললেই চলে। কয়েক মিনিটের মিছিল করে তা ভিডিও ধারন করে নিজেরাই ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর মিছিলে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা পলাতক থেকে অন্তত ৩ সপ্তাহ।
জানা যায়, বিদেশে পলাতক থাকা এমপি ও অর্থশালী নেতারা টাকা পাঠিয়ে এসব মিছিল আয়োজন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। অর্থের লোভে এসব মিছিল করে নেতাকে ছবি ভিডিও পাঠিয়ে দায়িত্ব পালন করে তারা। প্রতিটি মিছিলের জন্য কয়েকলাখ টাকা বরাদ্ধ থাকে নেতাদের তরফ থেকে। যেই টাকা দিয়ে তারা নিজেদের জন্য খরচ করার পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে ব্যয় করে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফসল ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান। সেই ঐক্যবদ্ধ প্রেরনাই পারে দেশের ভেতরে চলমান অস্থিরতা ও অন্যায় কার্যক্রম থামিয়ে দিতে। রাজনৈতিক স্বার্থকে দূরে ঠেলে একত্রিত হয়ে উদ্যোগ নিলে অশুভ শক্তি সামনে এগোবার সাহস পাবে না।
আপনার মতামত লিখুন :