৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতন হবার পর হতে দীর্ঘ ১০ মাসেরও বেশি সময় যাবত পলাতক রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান। স্বৈরাচার আমলে দলীয় পদের প্রভাব খাটিয়ে অফুরন্ত অর্থের মালিক বনে যাওয়ায় এই নেতার প্রতি চরম ক্ষোভ রয়েছে তণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। নিজে উধাও হলেও খোঁজ রাখছেন না বিপদগামী নেতাকর্মীদের।
দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ দখলে রেখে দুই হাতে অর্থ কামিয়ে বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হোন মজিবুর রহমান। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় তার দুটি গার্মেন্ট কারখানাসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ও মার্কেট রয়েছে। যার অধিকাংশই দলের প্রভাবে অর্থ কামিয়ে গড়েছেন।
এদিকে দলের সুবিধাভোগী নেতা হলেও মজিবুর রহমান ত্যাগীদের শুরু থেকেই অবম‚ল্যায়ন করতেন বলে ভাষ্য কয়েকজন তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীর। পটপরিবর্তিত বর্তমান সময়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দূরাবস্থা হওয়া সত্বেও সভাপতির পদে থাকা মজিবুর খোঁজখবর নেন না বলে অভিযোগ তাদের। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।
দেখা গিয়েছিল,২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার মাঝামাঝি সময় হতে স্বৈরাচার পতনের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট সকাল পর্যন্ত আন্দোলন দমাতে সাবেক সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের নির্দেশনায় নিজে স্বশরীরে উপস্থিত ছিল মজিবুরসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা। বিভিন্ন রকমের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আন্দোলনকালীন সময়ে ছাত্র-জনতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিন তারা।
আন্দোলনকালীন সময়কার ১৭ জুলাই হতে ৫ আগস্টে ঘটে যাওয়া বিভীষিকাম মুহূর্তে জনতাকে দমনে মজিবুর রহমানের নেতৃত্ব থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় ছিল। উল্লেখযোগ্য বলতে গেলে ২৬ জুলাই বিকেলটা ছিল মনে রাখার মতো। ওইদিন দুপুর হতে বিক্ষোভকারীদের নির্বিচারে হত্যার উদ্দেশ্যে মজিবুর রহমানের বাসভবনের সামনে একত্রিত হোন শামীম ওসমানসহ প্রায় ৬শ র মতো লোকজন যাদের প্রত্যেকের হাতে দেশী ও বিদেশি অস্ত্রের ভান্ডার ছিল। সেদিন দুপুর থেকে দলে দলে মজিবুরের বাড়ির আশপাশে জড়ো হোন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল ৪ টার সময়ে ফিল্মি স্টাইলে মাইক্রোবাসসযোগে রাইফেল হাতে মজিবুরের ভবনে আসেন শামীম ওসমান। শামীম ওসমানকে বহন করা গাড়িতে অস্ত্র হাতে দেখা যায়, ছেলে অয়ন ওসমান, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নিজাম, শামীম ওসমানের বেয়াইকেও। তবে তারা আন্দোলনরত মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে মহাসড়কে না উঠে বিভিন্ন ¯েøাগানে বাসভবনের সামনে থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল পর্যন্ত অস্ত্রের মহড়া দিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট সরকার পতনের বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান মজিবুর রহমান। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অন্তত দুই ডজনেরও বেশি মামলা রুজু হয়েছে। যাট ফলে গ্রেফতার ভয়ে পলাতক রয়েছেন।
সূত্রমতে, তিনি এখন ধানমন্ডি ল্যাবেড এলাকায় তার বড় ছেলে মাহমুদের বাসায় বসবাস করছেন। তবে নিজের অবস্থান সম্পর্কে দলের কোনো নেতাকর্মীকে অবহিত করছেন না।
এদিকে নিজে পলাতক হয়ে আরামের জীবনযাপন করলেও তার অধিনস্থ কোনো নেতাকর্মীর খোঁজ নিচ্ছেন না। ফলে কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন তৃণমূলের লোকজন। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক।
সিদ্ধিরগঞ্জ আ:লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী প্রতিবেদককে বলেছেন, মজিবুর রহমান দলের সুদিনে এককভাবে অর্থ কামিয়েছেন। তার সঙ্গে থেকে তার নাতি,ভাতিজা আর ভাগাভাগি ব্যতিত অন্যরা কেউ ব্যবসা বানিজ্যের সুযোগ পায়নি। দল পতনের পর হতে এখন পর্যন্ত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না।
আপনার মতামত লিখুন :