News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

অবশেষে ধরা খেলেন বহুরূপী মতিন প্রধান


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:২২ পিএম অবশেষে ধরা খেলেন বহুরূপী মতিন প্রধান

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বহুরূপী চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আবদুল মতিন প্রধান। রাজনৈতিক অবস্থান বদলে নেয়া ও সুযোগসন্ধানী আচরণের কারণে স্থানীয়ভাবে তিনি পরিচিত ছিলেন “পল্টিবাজ” মতিন প্রধান হিসেবে। একেক সময় একেক দলে যোগ দিয়ে প্রভাব বিস্তার ও সুবিধা আদায়ের কৌশলে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিলেন তিনি। তবে অবশেষে হত্যা মামলার আসামি হয়ে রাজনৈতিক দাপট আর চাতুর্য দিয়ে রেহাই পেলেন না এই বহুরূপী নেতা।

দলে দলে ঘোরাফেরা

আবদুল মতিন প্রধানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় আওয়ামী লীগের কৃষক সংগঠন থেকে। একসময় তিনি বাংলাদেশ কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির আমলে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক পদেও আসীন হন। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে আবারও ভোল পাল্টে নেন তিনি।

২০১৪ সালে শামীম ওসমান বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মতিন প্রধান নিজেকে ‘শামীম ওসমানের মামা শ্বশুর’ পরিচয়ে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। দলীয় কর্মসূচিতে শামীম ওসমানের ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন তিনি। এমনকি তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার কথাও উঠেছিল।

২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর তিনি ফুলের নৌকা উপহার দিয়ে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার আগেও ২০১৫ সালে বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

বিএনপি থেকে বহিষ্কার

আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাত, পৌরসভা থেকে টাকা আত্মসাৎ, দুর্নীতি এবং দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। তখন দলীয় নেতারা অভিযোগ করেছিলেন, মতিন প্রধান আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন। যদিও তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, এটি সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ষড়যন্ত্র।

আবারও ভোল বদল

আওয়ামী লীগের সঙ্গে দীর্ঘ সখ্যতার পর সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পালাবদলে ফের বিএনপির দিকে ঝুঁকেছেন মতিন প্রধান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলার চাপে পড়ে বিএনপির ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। বিএনপি নেতাদেরও দাবি, আওয়ামী লীগের আমলে মতিন প্রধানের কারণে অনেকেই নির্যাতন-জুলুমের শিকার হয়েছেন।

হত্যা মামলার আসামি

গত বছরের ২১ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মোহাম্মদ সজীব নামে এক দোকান কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সন্তানের হত্যার অভিযোগে প্রায় ১৩ মাস পর সজীবের মা আদালতে মামলা দায়ের করলে, আদালতের নির্দেশে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এ মামলা নথিভুক্ত হয়। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক এমপি শামীম ওসমান, নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি এবং মতিন প্রধানসহ মোট ৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বিতর্কিত চরিত্র

রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন মতিন প্রধান। কখনো বিএনপি, কখনো আওয়ামী লীগ—দল পাল্টে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার বহুরূপী চরিত্রই তাকে হত্যা মামলার আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মতিন প্রধান আসলে নারায়ণগঞ্জের সেই সব রাজনীতিবিদদের একজন, যাদের কাছে দল নয়, সুবিধাই বড়। তবে এবার তার সেই সুবিধাবাদী রাজনীতির শেষ রক্ষা হলো না।

Islam's Group