‘নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসমুক্ত ও মাদকমুক্ত গড়ে তুলবো’ বিএনপি নেতা জাকির খানের এ মন্তব্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাঁর দেওয়া বক্তব্য নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। মিনিটখানেকের বক্তব্যে বার বার থেমে যাওয়া, কথা আটকে থাকার বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে ২ সেপ্টেম্বর বিকালে জাকির খানের ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট করেন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান। সেখানে তিনি লিখেন, ‘হাউ সুইট (কি মিষ্টি)!’। তার এমন পোষ্টে ইতোমধ্যে আলোচনা সমালোচনা সৃস্টি হয়েছে।
আলোচিত সাংবাদিকের এমন পোস্টে কমেন্টসগুলোতে নেটিজনরা জাকির খানকে নিয়ে তুলোধনো করেন। মোঃ সাইদুর রহমান কমেন্টেসে লিখেন, ‘মাদক সম্রাট মাদক মুক্ত করবে এটা হাস্যকর’।
তানভীর আহম্মেদ লিখেছেন, ‘ডোপ টেষ্ট করালে এই লোকটারে পজেটিভ রেজাল্ট আসবে’।
কামরুল আলম লিখেছেন. ‘আরেক বদির আগমন’। ফাতেমা হোসেন লিখেছেন, ‘আরেকটা শামীম উশমাল’।
গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘টিডবিড টুডে’ প্যাজে ‘নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসমুক্ত ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো : জাকির খান’ পোস্ট করেন। সেখানে নেটিজনেরা জাকির খানের বক্তব্যে সমালোচনা করেন। ইয়াসিন আরাফাত কমেন্টেসে লিখেছেন, তিনি রঙ নম্বর। তাফসির ইসলাম রিফাত লিখেছেন, ‘মুখেই তো মাদক’।
১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশাল ও বর্ণাঢ্য র্যালী বের করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির নেতা জাকির খান। র্যালিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির নেতা জাকির খান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ রয়েছেন, তার সুস্থ্যতা কামনা করি। তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনা করি। এবং তারেক রহমান আসবে বীরের বেশে। দেশবাসীকে একটা মেসেজ দিতে চাই, এবার নির্বাচন হবেই হবে। তবে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে অবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেই হবে। আর নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসমুক্ত ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
এই বক্তব্যে দিতে গিয়ে তিনি বার বার এলোমেলো করে ফেলে, যার ফলে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা সৃষ্টি করে।
চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল টানা কারাবন্দি অবসান ঘটিয়ে মুক্ত পান তিনি। সদ্য মুক্তি পাওয়ার ৪ মাস ১৯ দিন পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম নিজের নেতৃত্বে শহরে মিছিল বের করে। মিছিলে মহানগর বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢল দেখা গেলেও সমর্থকদের মধ্যে ছিলো উচ্ছাস।
জাকির খান নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন ১৯৯৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার সময়ে। ওই সময়ে তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শহরে এসেছিলেন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগের কারণে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তার কোন পদ কপালে জুটেনি।
এর আগে জাকির খান ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতি গুরু জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি প্রয়াত নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধে। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা প্রয়াত কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরে পরিচিত পান জাকির খান। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে জেলে যান। কিন্তু তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। সে সময়ের বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান।
একই বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সাত মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হয়। এই মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এরপর আওয়ামী লীগের চার বছর ক্ষমতার সময় জাকির খান কারাবন্দি থাকেন। ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয় উচ্ছেদ করলে জাকির খানের পরিবারের ‘অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড’ ভেঙে যায়। ২০০১ সালে বিএনপির চারদলীয় জোটের ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় পাঁচ মাস জাকির জেলে থাকেন।
২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রয়ারি তৎকালীন বিকেএমইএর সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকারকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন জাকির খান। তিনি দেশ ছেড়ে পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি হয়। এর জের ধরে দীর্ঘ ২১ বছর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর দেশে ফিরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন জাকির খান। এতে নিশ্চিত করেন র্যাব ১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা। এর পর থেকে তিনি একাধিক মামলায় আদালতে চলমান হওয়ায় ৯৫২ দিন কারামুক্তি পেয়েছেন গতকাল ১৩ এপ্রিল। ব্যবসায়ী সাব্বির হত্যা ঘটনায় জাকির খানের সাথে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি ও বহিস্কৃত নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই হত্যা মামলায় তৎকালীন এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামী করা হলেও চার্জশীটে তার নাম বদলে জাকির খানকে প্রধান আসামী করা হয়। এতে করে গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জাকির খান।
আপনার মতামত লিখুন :