আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন এলাকায় বেশ আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকায় বেশ সরব ররেছেন তিনি। প্রতিনিয়তই তিনি নির্বাচনী প্রচারণামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে জনসাধারণের মাঝে হাজির হচ্ছেন। নিজের অবস্থান জানান দিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের পুনর্বিন্যাসে মামুন মাহমুদের আসন নিয়ে দুটানার মধ্যে পড়ে যেতে হচ্ছে। তিনি এতদিন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) এলাকাকে কেন্দ্র সরব থাকলেও আসন পুনর্বিন্যাসে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ ভাগ হয়ে দুই আসনে চলে গেছে। ফলে মামুন মাহমুদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতার শিকার হতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসন পুনর্বিন্যাসের ঘোষণা দিয়েছেন। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। স্বাধীনতার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা নিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠন করা হয়। তবে পরের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ ছিল শুধুমাত্র সোনারগাঁও নিয়ে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা ও সদর থানার দুটি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এতে ফতুল্লা, এনায়েতনগর, বক্তাবলী, কাশীপুর, কুতুবপুর, গোগনগর ও আলীরটেক।
এই অবস্থায় জেলা বিএনপির আহবায়ক মামুন মাহমুদকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হবে। তিনি এতদিন ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাকে ঘিরেই সরব অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু এবার নতুন করে তাকে সোনারগাঁ এলাকাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যার তার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সেই সাথে অনেক সময় তারা আন্দোলন সংগ্রামেও অংশ নিতে পারতেন না। ব্যবসা বাণিজ্যেও নানাভাবেই বাধার শিকার হয়েছেন।
সব মিলিয়ে তাদের যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন ছিলো না। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনেকবার তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করতে হয়েছে। পরিবারের সদস্যদেরও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। অনেক সময়ে পরিবারের সদস্যদের হেনেস্তার শিকার হতে হয়েছে।
এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই অবস্থায় একদম খালি মাঠে রয়েছে বিএনপি। দীর্ঘদিন পর খালি মাঠে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি যেন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছেন। কেউ কাউকে মানছেন না। অনেক সময় নিজেরাই নিজেদের সাথে প্রভাব আধিপত্যের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরাই যেন বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে আবির্ভাব হয়েছেন। প্রতিনিয়তই নারায়ণগঞ্জের কোনো না কোনো এলাকায় কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্ব›দ্বীতার খবর পাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা নির্দেশনা দিয়েছেন একরকম কিন্তু অধস্তন নেতাকর্মীরা করছেন আরেকরকম। কিন্তু এক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম রয়েছেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। তিনি নিজে সহ তার অনুসারীদেরকে একেবারেই বিতর্কমুক্ত রেখেছেন।
কিন্তু এবার আসন পুনর্বিন্যাসে মামুন মাহমুদকে দুটানায় পড়ে যেতে হচ্ছে। সেই সাথে তার অনুসারী নেতাকর্মীরাও দুইভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ফতুল্লা কিংবা সিদ্ধিরগঞ্জ যে কোনো একটি এলাকার নেতাকর্মীরা আসন পুনর্বিন্যাসকে কেন্দ্র করেই মামুন মাহমুদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :