News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

মাদকের গডফাদার ডন সেলিম


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫, ০৯:৫৬ পিএম মাদকের গডফাদার ডন সেলিম

প্রায়শই বলতেন ‘প্রধান ইজ ব্যাক’। মিডিয়ার সামনে এ উচ্চারণ করে তিনি আলোচিত। রূপগঞ্জের সমালোচিত এ ব্যক্তি নিজেকে ডন হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করতেন। বলতেন তিনি রূপগঞ্জকে মাদকমুক্ত করবেন। কিন্তু তিনি নিজেই এবার ধরা খেয়েছেন মাদক সংশ্লিষ্টতায়।

রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের ১২ নম্বর সড়কের একটি দ্বিতল ভবন। যার সামনের দেওয়ালে বড় করে টানানো ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বীর আবু সাঈদের ছবি। শুধু আবু সাঈদই নয় তার বিপরীত পাশে স্থান হয়েছে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধরও। এছাড়া বড় করে লেখা জুলাই অভ্যুত্থান, সাথে দিন অনুযায়ী ২৪ এর জুলাই ক্যালেন্ডার। ভবনে ঢুকতেই হাতের ডানে দেখা মিলবে জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া আরও কয়েকজনের ছবি। শুরুর গল্প শুনে যে কারোরই মনে হতে পারে এটি হয়তো জুলাই অভ্যুত্থানের কোন স্মৃতি সংগ্রহশালা কিংবা জাদুঘর। উপরে উঠতেই চক্ষু যেনো ছানাবড়া। অভ্যর্থনা কক্ষে ছবি টানানো বারবার ক্যাসিনো কান্ডে আলোচনায় আসা ও জেলে যাওয়া সেলিম প্রধানের ছবি। পরক্ষণই বোঝা যায় এটি আসলে তার একটি রেস্টুরেন্ট। এখানে টানানো ট্রেড লাইসেন্সের সাথেও কোন মিল নেই রেস্টুরেন্টটির নামের।

গুলশান থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোনের এই নেক্সাস ক্যাফে প্যালেস রেস্টুরেন্টের আড়ালে চলতো অবৈধ সীসা বার।

পুলিশ সুত্র আরো জানায়, এই ভবনেই শুক্রবার রাতে অভিযান চালায় তারা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করেন জুলাই আন্দোলনকে পুঁজি করে ভয়ংকর এই ব্যবসার মূল হোতা, মালিক বারবার ক্যাসিনো কান্ডে নাম জড়ানো সেলিম প্রধান। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়নি তার। শেষমেষ রাত ৩টার দিকে সহযোগী ৮ জনসহ তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়ে নগদ টাকাসহ ৬.৭ কেজি সিসা ও সিসা গ্রহণের সরঞ্জাম। এতেই স্পষ্ট যে জুলাই আন্দোলনকে পুঁজি করে রেস্টুরেন্টের আড়ালে সেলিম প্রধান চালাতো অবৈধ সিসা বার।

এই মাফিয়া সম্পর্কে স্থানীয়দেরও অভিযোগের শেষ নেই। সারারাত ধরে এই সিসা বারে আনাগোনা দেশের সব ভিআইপিদের। এর আড়ালে নাকি নারী সাপ্লাই ব্যবসাও পরিচালিত হতো এখানে, এমন অভিযোগও পাওয়া যায় সরেজমিনে। যদিও সেলিম প্রধানের ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চাননা গণমাধ্যমের সামনে।

২০১৯ সালে থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হোন এই মাফিয়া। তখন তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গুলশানের কার্যালয় ও বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে ৪৮ বোতল বিদেশি মদ, ২৯ লাখ টাকা, ২৩টি দেশের মোট ৭৭ লাখ সমম‚ল্যের বৈদেশিক মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, দুটি হরিণের চামড়া, তিনটি ব্যাংকের ৩২টি চেক ও অনলাইন গেমিং পরিচালনার একটি বড় সার্ভার জব্দ করে র্যাব। দীর্ঘ চার বছর কারাগারে থাকার পর অবেশেষে ২০২৩ সালের অক্টোবরে জামিনে মুক্তি পান সেলিম প্রধান। আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত জুনে রিপাবলিক পার্টি-বিআরপি আত্মপ্রকাশ করলে সেই রাজনৈতিক দলের প্রধান উপদেষ্টা হন সেলিম প্রধান।

মাদক নিয়ন্ত্রন আইনে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগাড়ে অনলাইনে ক্যাসিনো চালিয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মাফিয়া ডন সেলিম প্রধান। ফ্যাসিস্ট শামীম ওসমানকে বড় ভাই ডাকা এই মাফিয়ার বিরুদ্ধে যেনো একে একে বেড়িয়ে আসছে নানা রকম সব অপকর্মের ফিরিস্তি। যার মধ্যে রয়েছে স্পা, হোটেল, বিউটি পার্লার ব্যবসার আড়ালে নারী সাপ্লাই, চাঁদাবাজি, মাদক, চোরাচালান, প্রতারণা করে বিদেশি নারীদের বিয়ের ফাঁদে ফেলাসহ শত কোটি টাকার ঋণ খেলাপির অভিযোগ।

অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনোর গুরু সেলিম প্রধান। ঢাকার অপরাধ জগতের ডন তিনি। পশুর খাটালে চাঁদাবাজি, হোটেল, স্পা, ক্যাসিনো পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।দেশে বিদেশে অনুমোদনহীন ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সেলিম প্রধান গ্রেফতার হওয়ার পর তার অপরাধ সম্পর্কে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের অনলাইনের মাধ্যমে ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন সেলিম। অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে এই ক্যাসিনো চালানো হতো। এসব করে কামিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।

ঋণের নামে রূপালী ব্যাংকের ১শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে অপরাধ জগতে নাম লেখান স্পা ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান। জাপানের অর্থায়নে শিল্প গড়ার নামে ঋণ নেয়া হলেও পুরো টাকাই আত্মসাৎ করা হয়। একপর্যায়ে টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান সেলিম। স্থায়ী আবাস গড়েন জাপানের রাজধানী টোকিওতে। কিন্তু টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হন। জাপান থেকে বহিষ্কার করা হলে চলে যান আমেরিকায়। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ যাত্রায়ও সফল হননি। সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তবে তাকে বেশিদিন কারাবাস করতে হয়নি। এরপর গুলশানের একটি স্পা সেন্টার ঘিরে তিনি নতুন করে নেটওয়ার্ক গোছানোর কাজ শুরু করেন।

Islam's Group