জাকির খান, নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে তরুণদের এক প্রতীকের নাম। ১৯৯৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা আমলেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন জাকির খান। তাকে সংবর্ধনা দিতে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শহরে এসেছিলেন। এরপর থেকে তার বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগের কারণে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে এক যুগে কোন পদ পাননি। এক সময়ে জাতীয় পার্টির এমপি প্রয়াত নাসিম ওসমানের হাত ধরে কিশোর বয়সে ছাত্রসমাজে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতা পর জাকির খান নাসিম ওসমানের সাথে বিরোধীতা জড়িয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে নামেন। দেওভোগের আলোচিত দৌলত হোসেন খানের ছেলে হিসেবে জাকির খান ছিলো আলোচিত। একাধিক হত্যা সন্ত্রাস চাঁদাবাজি সহ প্রায় ৩৩টি মামলা আসামী ছিলেন তিনি। কয়েক বার জেলে ছিলেন দীর্ঘ সময়ে।
২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা আগে পরে জাকির খান পলাতক জীবনে চলে যান। এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন তিনি, দেশ ছেড়ে পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। এর জের ধরে দীর্ঘ ১৯ বছর দেশের বাহিরে ছিলেন জাকির খান। বিশ্বের করোনা ভাইরাস প্রকোপ যখন থমকে যায় তখনই ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর দেশে ফিরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন জাকির খান। একে একে ৩৩টি মামলায় আদালতে চলমান হওয়ায় টানা ৯৫২ দিন কারাবন্দি ছিলেন তিনি। ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলা খালাস পাওয়া পরপর কয়েকটি মামলা খালাস পান জাকির খান। পরবর্তিতে র্যাবে হাতে অস্ত্র সহ মামলায় জামিন নিয়ে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল মুক্তি পান।
প্রায় ২১ বছর পর মুক্ত জীবনে প্রথম শো-ডাউন করেন জেলখানা প্রধান ফটকের সামনে থেকে জাকির খান। ওইদিন সানগ্লাস ও শার্ট পরিহিত খানের দুই হাতে দেশের ও দলীয় পতাকা নিয়ে হাস্যজ্জল দেখা যায়। পরবর্তিতে বিএনপি হাইকমান্ড থেকে জাকির খানকে নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তখন তিনি চমক দেখান দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর রায় সহ তিন নেতাকে নিয়ে জিয়া মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনে।
দীর্ঘ সময়ের পর সানগ্লাস ও লাল-সুবজের শার্ট পরিহিত জাকির খান গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশাল ও বর্ণাঢ্য র্যালী বের করেন। র্যালি মাঝেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির নেতা জাকির খান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ রয়েছেন, তার সুস্থ্যতা কামনা করি। তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনা করি। এবং তারেক রহমান আসবে বীরের বেশে। দেশবাসীকে একটা মেসেজ দিতে চাই, এবার নির্বাচন হবেই হবে। তবে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে অবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতেই হবে। আর নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসমুক্ত ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ। এই বক্তব্যে দিতে গিয়ে তিনি বার বার এলোমেলো করে ফেলে, যার ফলে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। জাকির খানের ছবি সম্বলিত উক্ত শিরোনাম দিয়ে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান একটি পোষ্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘হাউ সুইট (কি মিষ্টি)!’। আলোচিত সাংবাদিকের এমন পোষ্টে কমেন্টসগুলোতে নেটিজনরা জাকির খানকে নিয়ে তুলোধনো করেন।
অন্যদিকে ৫দিনের ব্যবধানে এবার জামাই সাজে পবিত্র জশনে জুলুসে ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সঃ) র্যালিতে দেখা মিলেছে জাকির খানকে। প্রচন্ড রৌদ্রতাপে সবুজ পতাকা হাতে কটি পাঞ্চাবী ও মাথায় পাকড়ি পরিহিত জাকির খানকে হাস্যজ্জল অবস্থায় দেখা যায়। যার ফলে জাকির খানকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে ভিন্ন সাজে তাকে দেখা যাচ্ছে। যার ফলে তার সমর্থক ও নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে আলোচিত হয়ে পড়ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :