News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

নারায়ণগঞ্জে স্বতন্ত্র বিদ্রোহীদের নিয়ে ভয়


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:২৫ পিএম নারায়ণগঞ্জে স্বতন্ত্র বিদ্রোহীদের নিয়ে ভয়

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পাচঁটি সংসদীয় আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনড় বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিতরা। বিগত সরকারের নির্যাতিত জুলুম হামলা মামলা গ্রেপ্তার কারাবাসের পরও দলের মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে ঘোষিত প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাজপথ সরগরম করে রেখেছেন বঞ্চিতরা। দলীয় মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে এলাকা ভিত্তিক মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মী সক্রিয় করতে কাজ করছেন। এতে দলের মনোনীত প্রার্থীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে তেমনটি নির্বাচনে রাজনীতি শেষ নেই সেই বাতাস ঘুরছে।

বঞ্চিত প্রার্থীদের বিষয়ে জোরালো হস্তক্ষেপ কামনায় হাইকমান্ডে তোড়জোড় করেও সুরাহা পাচ্ছে না বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা। কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে তারা সমঝোতা করতে চান মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে। ইতোমধ্যে ৫টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিতরা কৌশলে গ্রুপিং ও দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকলেও আসনে বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অনড় অবস্থানে দিক যাচ্ছেন। এতে আগামী নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থীরা, এমন নির্বাচনী বাতাস গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। একটি আসনে দুই দফা প্রার্থী ঘোষনা তালিকা ফাঁকা রাখা হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনটি নতুন মেরুকরণে রূপ নিয়েছে। দুই সাবেক এমপিকে টপকিয়ে মনোনীত হয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাকে মনোনীত করায় জেলা বিএনপি আহবায়ক মামুন মাহমুদ, সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম সহ সাত মনোনয়ন বঞ্চিতরা এক টেবিলে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে মান্নানের মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে প্রতিনিয়ত রাজপথে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ ও মশাল মিছিল করে যাচ্ছেন বঞ্চিতদের সমর্থকরা। জানা গেছে, মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন না হলেও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। এই আসনে মাঠের রাজনীতিতে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। দুই আসনেই নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য মনোনয়ন, জোটের হিসাব-নিকাশ এবং ‘স্বতন্ত্র পথের ভাবনা’ সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি প্রতিদিন নতুন রূপ নিচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন। এই আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদকে। সর্বশেষ হাইকমান্ডের চাপে সুমন মাঠ ছাড়লেও বিএনপি সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন।

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভুইয়া সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের এক কাতারে নিয়ে আলোচিত হয়েছেন। ফলে তার প্রতিপক্ষ কুশলী হয়ে বিএনপি এক কর্মীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন তুলেছেন।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছেন বিএনপি হাইকমান্ড। জোটের প্রার্থীকে মনোনীত হওয়ার বার্তায় এই আসনে বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ আলী, সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি শাহ আলম, জেলা বিএনপি আহবায়ক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, ফতুল্লা থানা বিএনপি সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি ছিটকে পড়েছেন।

জানা গেছে, এই আসনে ১৯৯৬ সালে বিএনপির সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী স্বতন্ত্র হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপির পদবিহীন একাংশ নেতা-কর্মীরা মোহাম্মদ আলীকে জয়ী করার লক্ষ্যে নির্বাচণী এলাকা সভা সমাবেশ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিনে মোহাম্মদ আলী তার ঘনিষ্ঠদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বিএনপি যদি ধানের শীষের প্রার্থী না দেয়, তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করবেন। এই আলোচনা এখন কুতুবপুর থেকে কাশীপুর, ফতুল্লা থেকে গোগনগর সর্বত্র রাজনৈতিক চায়ের টেবিলের প্রধান বিষয়। তার জনপ্রিয়তা, ব্যক্তিগত বলয় এবং দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশের সমর্থন বিবেচনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, স্বতন্ত্র হলে মোহাম্মদ আলী বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন জোটের প্রার্থী কাসেমীর সামনে। অন্যদিকে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শিল্পপতি শাহআলমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকবেন বলে সমর্থকরা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে চার মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী এখনো সক্রিয় রয়েছেন। এদের মধ্যে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা অন্যতম জালাল হাজী সন্তান ও সাবেক তিন বারের এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে নব্য যোগদানকারীকে এই আসনে মনোনীত করায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের বঞ্চিতরা আরো হলেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা ও মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এদের মধ্যে বিএনপি ঘোষিত মনোনীত প্রার্থী পক্ষে গেছেন সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু ও মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এরপর আরও চার প্রার্থী মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের অপেক্ষায় মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তাদের সমর্থকরা।

বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে শহর-বন্দর আসনে এখনো আলোচিত রয়েছেন সাবেক এমপি আবুল কালাম। সেখানে নতুন মুখ নিয়ে কতটুকু সফলতা পাবেন মনোনীত প্রার্থী এখনো পরিস্কার হয়নি। মহানগর বিএনপির একাধিক গ্রুপিংকে এক কাতারে চেষ্টাও বিভ্রান্তিতে রয়েছেন মনোনীত প্রার্থী। অন্যদিকে শহর-বন্দরের সাধারণ ভোটারদের শক্তি মাঠ চষে বেড়াতে প্রস্তুতি নিয়েছেন আবুল কালাম।

আগামী নতুন বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ। ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র জমা শেষদিন।

Islam's Group