দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা থাকার পর আবারও ধীরে ধীরে পরিকল্পিতভাবে মাঠে ফিরেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগের টানা শাসনামলে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম ছিল প্রায় অদৃশ্য। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, গোপন সাংগঠনিক তৎপরতাও ছিল নানা প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে যে নাটকীয় পরিবর্তন আসে, তার সুযোগ নিতে শুরু করেছে দলটি।
ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকেই জামায়াত প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফেরার কৌশল গ্রহণ করে। হঠাৎ উত্তেজনামূলক কর্মসূচির পথে না গিয়ে শৃঙ্খলা ও নীরব সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর থেকেই তারা নীরবে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। চাচ্ছেন ভোট। একইসঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি জামায়াতের পুরোনো কৌশলেরই আধুনিক রূপ।
এর ব্যতিক্রম নয় শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ। জেলার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন নীরব থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে এখানে জামায়াতের সাংগঠনিক তৎপরতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের মতে, নীরব প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই জামায়াত ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে একটি শক্ত ভোট ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে চাঙা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসাইন মোল্লা, যিনি এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরিচিতি পান। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা—দুপ্তারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল জব্বার। আর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং জেলার সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ।
প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই জামায়াত-শিবিরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়েছে। তারা দাবি করছেন, ঘোষিত প্রার্থীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় পরিচিত মুখ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সক্ষম। যদিও পাঁচটি আসনের সবগুলোতে জয় নিশ্চিত করা কঠিন, তবুও সম্মানজনক ভোট পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী দলটি। এমনকি একাধিক আসনে চমকপ্রদ ফল আসতে পারে বলেও মনে করছেন সমর্থকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত এখনো তৃণমূল পর্যায়ে অন্য বড় দলগুলোর মতো শক্তিশালী না হলেও আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা, ধারাবাহিক কর্মসূচি এবং সংঘাত এড়িয়ে চলার কৌশল তাদের বাড়তি সুবিধা দিতে পারে। সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই যে ত্রিমুখী বা বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হতে যাচ্ছে, তা বলাই যায়। নীরবে কিন্তু সুপরিকল্পিতভাবে এগোনোর এই কৌশল শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে কতটা রাজনৈতিক লাভ এনে দেয়—তা জানতে এখন অপেক্ষা নির্বাচনের মাঠের বাস্তব ফলাফলের।

































আপনার মতামত লিখুন :