চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি, ৯ মার্চ, ১২ মে’র পর ১৭ সেপ্টেম্বর সড়ক অবরোধ করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড সড়ক বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়ক অচল করে রাখে অটোরিকশা চালকেরা। দীর্ঘ দিন যাবৎ জেলা প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে বার বার অটো রিকশা সহ বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে দাবি আদায় করা হচ্ছে বলে মন্তব্য ভুক্তভোগী জনসাধারণের।
ক্ষুদ্ধ নগরবাসী ও শ্রমজীবীরা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে জেলা প্রশাসনের দূরত্বে বুঝা যায় নগরবাসী দুর্ভোগগুলোতে। শহরের প্রধান প্রধান সড়কের পাশাপাশি এখন শাখা রোডেও অবৈধ যানবাহনের কারণে ভয়াবহ যানজটের কবলে। অন্যদিকে ফুটপাতে হাটাঁর স্থানে অবৈধ হকার বসিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত জিম্মি করে রাখা হয়েছে। যার কারণে, স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থী-অভিভাবক, শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ, অসুস্থ রোগী ও বৈধ যানবাহন চরম ভোগান্তিতে পড়েন। নগরীতে ইজিবাইকের অবৈধ স্ট্যান্ড এবং সড়কে অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারণে যানজট একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলো নেতাদের একত্রে রাজপথে একত্রিত না হলে আগামীতে অবৈধ যান চালকদের ভয়াবহ রূপ অপেক্ষা করছে।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরউদ্দিন আহম্মেদ জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন-সিটি কর্পোরেশন ও রাজনীতি দলের নেতাদের অনিচ্ছা নগরে ভোগান্তি কমছে না। যার কারণে নারায়ণগঞ্জ শহনে বসবাস ও চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স¤প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়, যেখানে ইজিবাইকের শহরের মূল সড়কে প্রবেশ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া কিছুটা যানজট কিছুটা কমে। কিন্তু গত দুই মাস যাবৎ আবারো যানজটের প্রকোপ রূপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি বছরের ৫ ফেব্রæয়ারি দুপুরে চাষাঢ়া চত্ত¡র, রাইফেল ক্লাব সংলগ্ন লিংক রোড, নবাব সলিমুল্লাহ রোড এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটী সড়কে ইজিবাইক চালকরা তাদের গাড়ি থামিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। তারা শহরের ভেতরে যানবাহন প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেন, এবং কেউ প্রবেশ করতে চাইলে তাদের উপর চড়াও হন। পরবর্তীতে পুলিশ ও ছাত্ররা এসে তাদের সরে যেতে অনুরোধ করলে তারা বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থান নিতে শুরু করেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তারা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন, যার ফলে নগরীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ইজিবাইক চালকরা জানান, ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা শহরে তাদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছে এবং যানবাহন ডাম্পিং করে জরিমানা করছে। তারা তাদের দাবি তুলে ধরেন যে, তাদের শহরে ঢুকতে দেওয়া উচিত, অন্যথায় যানবাহন চালাতে পারবে না।
এর এক মাসের ব্যবধানে গত ৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরে অবাধে চলাচলের দাবিতে সিটি করপোরেশনের সামনে অটোরিকশা জড়ো করে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন অটোরিকশা চালকরা। এসময় সড়কে এলোমেলোভাবে অটোরিকশা ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন চালকরা। তারা নগর ভবনের গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। চালকরা মূল শহরে বাধাহীনভাবে অটোরিকশা চালানোর অনুমতি দাবি করেন। পাশাপাশি পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অটোরিকশা চালকদের জরিমানার প্রতিবাদ জানান।
পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদের পর গত ১২ মে নারায়ণগঞ্জ শহরে অটোরিকশা চলাচলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে হামলা চালায় অটোরিকশা চালকেরা। এ ঘটনায় সিটি করপোরেশনের স্টাফসহ অন্তত আটজন আহত হয়। এ সময় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নগর ভবনের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। সিটি করপোরেশনের স্টাফরা হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। হামলায় গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার সম্রাট ইসলাম, যানজট নিরসন কর্মী শাওন, লিটন ও পলাশ। এর আগে গ্রীন এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জের অংশ হিসেবে এবং শহরে যানজট নিরসনে মূল শহরে অটোরিকশা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে জেলা প্রশাসন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। শহরের প্রবেশ পথে অনুমোদনহীন অটোরিকশার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
হামলায় আহতরা জানান, তারা বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করছিলেন এবং সিটি করপোরেশনের কর্মীরা তাদের সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই অটোরিকশা চালকেরা তাদের ওপর চড়াও হয়ে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে। তারা আরও জানান, হামলাকারীদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে। আজকের এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও সিটি করপোরেশনের স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন জানান, কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই হামলাকারীরা সন্ত্রাসী কায়দায় দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের গুরুতর আহত করেছে।
তিন মাসের ব্যবধানে ১৭ সেপ্টেম্বর শহরের যানজট নিরসনের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের ওপর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) চালকরা হামলা ঘটনা ঘটে। দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনার পর ইজিবাইক চালকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। এর ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। তাদের হস্তক্ষেপে চালকরা অবরোধ তুলে নেয়। ইজিবাইক চালকরাও অভিযোগ করেছেন যে, যানজট নিরসনকর্মীরা তাদের মারধর করেছেন এবং এতে তাদেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর বেলা সাড়ে তিনটায় উভয়পক্ষকে নিয়ে নিজ কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। এ সভায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের করা হয়ে বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, এই ধরনের সংঘাত যাতে আর না বাড়ে, সে জন্য আমরা দ্রæত বৈঠক করেছি। উভয় পক্ষকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, ইজিবাইক চালকদের জন্য যে নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাদের অবশ্যই সেই সীমানা মেনে চলতে হবে। সংঘর্ষে যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে। একই সাথে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে, যা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, শহরের শৃঙ্খলা বজায় রাখা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। আমরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছি এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক করেছি।
আপনার মতামত লিখুন :