নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫নং ঘাট দিয়ে নির্মাণাধীন কদমরসুল সেতু নিয়ে বন্দর এবং নারায়ণগঞ্জে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ধূ¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে বন্দর এবং শহরবাসীর মাঝে। পরিস্থিতিতি ইতোমধ্যে উত্তপ্ত পর্যায়ের দিকে যেতে শুরু করেছে। বন্দরের মানুষ ইতোমধ্যেই পশ্চিমাংশের নকশা পরিবর্তনের দাবি উত্থাপনকারীদের দুষ্টু চক্র এবং সেতু নির্মাণ বন্ধের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যায়িত করতে শুরু করেছেন।
সেতু নির্মাণের ব্যাপারে বন্দরবাসীর ব্যানারে বর্তমান নকশায় সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন একটি পক্ষ। অন্যদিকে ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠনের ব্যানারে সেতুর পশ্চিমাংশের মুখ পরিবর্তনের দাবিতে পৃথক স্মারক লিপি জমা দেওয়া হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিতব্য কদম রসুল সেতু নিয়ে সেতুর বিদ্যমান নকশায় পশ্চিমাংশের র্যাম্প (মুখ) নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে রাখায় যানজট বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যা নিয়ে র্যাম্পের মুখ ও নকশা পরিবর্তনের দাবি দাবি সহ উঠে আসা ভিন্ন মতগুলোও বিবেচনায় নিয়ে উন্মুক্ত মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছেন।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেল চারটায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তনের পরীক্ষণ হলে (পাঁচ তলা) উক্ত মত বিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে বন্দরে ১৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় বন্দরের সিরাজদৌল্লা ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় একটি মত বিনিময় সভায় হয় যার নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শিপলু। ওই মত বিনিময় সভা আহবানের এজেন্ডা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, দুষ্টু চক্রের চক্রান্ত উপেক্ষা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে কদম রসুল সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রæত বাস্তবায়নের দাবিতে করণীয় সম্পর্কে মত বিনিময় সভা।
নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে উন্মুক্ত মত বিনিময় সভা সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, আমরাও চাই কদম রসুল সেতুটি নির্মাণ হোক। তবে আমরা যাচ্ছি সেতুটির পশ্চিমাংশের মুখের নকশা পরিবর্তন করে করা হোক। কারণ যে নকশায় কাজ ধরা হয়েছে এতে নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে এসে নামবে। এখানে নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল, ফ্রেন্ডস মার্কেট, দ্বিগুবাবুর বাজার সহ ১নং রেলগেট এলাকার কারণে সারাদিন যানজট লেগেই থাকে। এখানে সেতুর মুখ নামলে সেই যানজট আরো বৃদ্ধি পাবে। বন্দর থেকে যারা গাড়ি নিয়ে সেতু দিয়ে আসবে তারা দীর্ঘ সময় সেতুর উপরই আটকে থাকবে। সেতু হোক সেটি আমরাও চাই। কিন্তু আমাদের দাবি নকশাটি পরিবর্তন করে করা হোক যাতে করে এই যানজটের সমস্যায় না পড়তে হবে।
এদিকে বন্দরে পাল্টা মতবিনিময় সভা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। আমি বিষয়টি জেনে রাব্বি ভাইয়ের সাথে আলোচনা করবো।
এদিকে অ্যাডভোকেট শরীফুল শিপলু বলছেন, যারা যানজটের অযুহাতে পশ্চিমাংশের মুখ পরিবর্তনের দাবি তুলছেন তারা মূলত রেলওয়ে মার্কেট, চারারগোপ কলার আড়ৎ, মাউরা হোটেল সহ কিছু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব কথা বলছেন। তারা মূলত নকশা যানজটের অযুহাতে নকশা পরিবর্তনের দাবিতে কৌশলে কদম রসুল সেতুর নির্মাণ কাজটি বন্ধ করে দিতে চাইছেন।
তিনি আরো বলেন, এখন যারা নকশা পরিবর্তনের দাবি তুলছেন তারা একসময় সাবেক মেয়র আইভীর সব থেকে ঘনিষ্ঠজন এবং সুবিধা ভোগী ছিলেন। সেতুটির জন্য মেয়র আইভী তিনটি স্থান নির্ধারণ করেছিলেন। প্রথম নকশায় কুমুদিনির ভেতর দিয়ে মেট্টো হল সংযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ কুমুদিন জায়গা দিতে চায়নি। দ্বিতীয়টা ৫নং ঘাট নদীর পাড় দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কার্যালয় সরিয়ে। সেটিতেও জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়বে মনে করা হয়। তৃতীয়টি হলো বর্তমান নকশা। সকল সম্ভাবনা যাচাই করেই করা হয়েছে। এই নকশাটা বাস্তবায়ন হলে যাদের সমস্যা রেলওয়ের জায়গা দখল করে যারা অবৈধভাবে দোকানপাট বানিয়েছেন, যারা হকার্স মার্কেট করেছেন, মাউরা হোটেল সহ রেলওয়ে এবং বিআইডব্লিউটিএ এর জায়গা যারা অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছেন তারা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই রফিউর রাব্বি গং তাদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ভাবে সুবিধা নিয়ে, যানজটের একটি অযৌক্তিক দাবি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে নামবে বলে মোড় পরিবর্তনের দাবি তুলছে। মূলত এটি বলে কৌশলে কাজটি বন্ধ করতে চাচ্ছেন। কারণ এই জায়গাটি ছাড়া সংযোগ সড়ক যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নাই। কলেজের সামনে যাবে এটা কোন যৌক্তিক কারণ না। এখানে আরো অনেক জায়গা রয়েছে রেলওয়ের। এর বিনিময় সিটি কর্পোরেশন রেলওয়ের থেকে জায়গাও নিয়েছেন। মুখ পরিবর্তন যেহেতু সম্ভব না সেহেতু মুখ পরিবর্তনের দাবি তোলা মানে সেতুর কাজটি কৌশলে বন্ধ করে দিতে চাইছেন তারা।
প্রসঙ্গত, এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করতে প্রস্তাবিত কদম রসুল সেতুর পশ্চিমাংশের সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখ পরিবর্তনের দাবিতে শহরের কালীর বাজার এলাকায় ‘বৃহত্তর কালীর বাজার ব্যবসায়ী–ি শক্ষা ও ধর্মীয় ১৩টি প্রতিষ্ঠান এর ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রফিউর রাব্বি।
এর আগে ৬ আগস্ট ১৩টি ব্যবসায়ী সংগঠনের উদ্যোগে সেতুর পশ্চিমপাড়ের মুখ পরিবর্তনের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়।
এদিকে গত ১ জুলাই ‘শীতলক্ষ্যা সেতু বাস্তবায়ন নাগরিক আন্দোলন’ ব্যানারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শিপলুর নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন এস এম আব্দুস সালাম, আবুল কালাম আহমদ, মো. মাঈন উদ্দিন মানিক, অ্যাডভোকেট মো. শরীফুল ইসলাম শিপলু, ডা. ফারুক হোসেন, কাজী সুজন, হাজী শাকিল, মো. আলমগীর, অ্যাডভোকেট আসিফুজ্জামান ও এমকে মামুন প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :