News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

ফিরছে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা, বিতর্কে বিএনপিও


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম ফিরছে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা, বিতর্কে বিএনপিও

বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ আর দৈন্যদশার ভিড়ে ফিরতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এলাকাতে অবস্থান তৈরি করতে হাত মিলাচ্ছে বিএনপির অনেকের সঙ্গে। অর্থ লোভে বিএনপিও তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। অপরদিকে বিএনপিরও কেউ কেউ ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠতে শুরু করেছে।

বন্দর

বন্দরের উত্তরাঞ্চল খ্যাত মদনপুর আজও এক আতঙ্কের নাম। আজও এটি সন্ত্রাসের জনপদ নামে পরিচিত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পরিবহন সেক্টর, জমি দখলসহ মাদক ব্যবসা জমজমাট। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নানা কৌশলে আবারো এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে তখনকার আমলের নিয়ন্ত্রক সন্ত্রাসীরা। এক সময়ে এ জনপদ কামু-সুরত আলী বাহিনীর অবসান হলেও নব্যগডফাদার রূপে নিজেকে জাহির করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আমির হোসেন। বিগত সময়ে আজমেরী ওসমান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের উপর ভর করে মদনপুর, চানপুর স্ট্যান্ডে প্রভাব বিস্তার করেন আমির। ৫০০ সিএনজি থেকে সে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে, ৬০০ আটো থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। এভাবেই প্রতিদিন ৪০০ হকার থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে। এছাড়াও  নাফ গাড়ি থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা, শ্রাবণ বাস থেকে ১০০ টাকা, হিমালয় বাস থেকে ১২০ টাকা, দোয়েল বাস থেকে মাসে দেড় লাখ টাকা এবং স্বদেশ বাস থেকে মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে। ২০১৬ সালে মদনপুরে আজমীর ওসমানকে এনে মানুষের উপর সে জোর জুলুম ও অন্যায় অত্যাচার চালায়। এমনইভাবে মদনপুরের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার খলিলকে দিনে দুপুরে আমির প্রকাশ্যে ওর লোক দিয়ে আক্রমণ করে তার মাথায় ও ঘাড়ে চাইনিজ কুড়াল সাথে দেশীয় অস্ত্র দ্বারা গুরুতর ভাবে যখম করে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায়। এবং পুলিশের সাথে গোলাগুলি করে একজন মারা যায়। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ও পুলিশের দুটি সর্টগান সাথে ওয়্যারলেস ছিনিয়ে নেয় আমির ও তার বাহিনী। আমির ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে ইটের ভাটায় বিক্রি করে দেয়। তার প্রতিবাদ করায় জমির মালিক মফিজুল মসজিদ থেকে নামাজ পরে বের হওয়ার পর বাড়ির সমনে থেকে অস্ত্রের মুখে প্রকাশ্যে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। আমির ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে পাশের ইটের খোলায় নিয়ে যায় পরে তাকে মারধর করে গুরুতরভাবে যখম করে। সোনারগাঁও উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের এর ওলিপুরা বাজারের পাশে মারব্দি ও কান্দাপাড়া গ্রামে আমিরের একটি বাংলো বাড়িতে ইতোমধ্যে তল্লাশি চালিয়ে অস্ত্র বানানোর অনেক সরঞ্জাম উদ্ধার করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এসকে শাহীন

সদর উপজেলার ফতুল্লার কায়েমপুর এলাকাতে এবিসি স্কুলের সামনে এক ব্যক্তির চায়ের দোকান দখলের অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক এসকে শাহীনের বিরুদ্ধে। ৫ সেপ্টেম্বর সকালে লোকজন দিয়ে ওই দোকান উচ্ছেদ করা হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দেওয়াতে উল্টো তাকে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। কাইউম নামের ওই ব্যক্তি লিখিত অভিযোগে জানায়, তিনি ১০ বছর ধরে চায়ের দোকানদারী করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কয়েকদিন ধরে এসকে শাহীন সহ ১০-১২ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি তার দোকানে গিয়ে ভাড়া চায়। কিন্তু আমি ভাড়া দিতে অনীহা প্রকাশ করি। ৫ সেপ্টেম্বর সকালে শাহীনের লোকজন এসে আমার দোকান ভাঙচুর শুরু করে। ক্যাশবাক্সে থাকা ১৪শ টাকা লুটে নেয়। ভাঙচুর করে মালামাল। বাধা দিলে আমাকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

ডিশ ডালিমের দলবদল

ডালিম ওরফে ‘ডিশ ডালিম’। ফতুল্লার লালখা এলাকায় অপরাধ করার জন্যই নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আশ্রয়। ভাতিজা সজলের মাধ্যমে বিগত সময়ে নিয়ন্ত্রণ করেছেন মাদক, চুরি, ছিনতাই, ভূমিদস্যুতা। ছিনতাইকালে বাহিনীর সদস্যদের হাতে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। এখনো ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে দল পাল্টে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। যুবলীগে কোন পদ পদবী ছিল না ডালিমের। তবে, যুবলীগ নেতা আজমত আলীর ঘনিষ্ট সহচর পরিচয়ে বনে গেছেন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির একজন নেতাকে ম্যানেজ করে অবস্থান করছিলেন নিজ এলাকাতে। করেছেন ব্যবসা-বাণিজ্য, অপরাধের নিয়ন্ত্রণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, ডালিমদের ভাইদের মধ্যে আবুল হোসেন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়াও ভাতিজা সজলের বিয়েতে উকিল হয়েছেন ফতুল্লার প্রভাবশালী এক নেতা। তাদের প্রভাবে এখন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়াতে চাইছেন। আওয়ামী লীগ শাসন আমলে ডালিম বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে লালখাঁ, রামারবাগ ও আশপাশের এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সবশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থানরত মুরসালিন আলম গুলিবিদ্ধের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামী হয়েছে ডালিম, ইবু ও সজল। এক সময় ফতুল্লার শিয়াচরের লালখাঁ এলাকায় সিনেমার সিটি ও ডিবিডি ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন ডালিম। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে কাঠেরপুলের নিয়ন্ত্রণ নেন গিয়াসউদ্দিন ওরফে কাইল্লা গেসু ও তার ভাই আজমত আলী। তাদের সহযোগীতায় প্রভাব বিস্তার করে ক্যাবল টিভির (ডিস) ব্যবসার নেটওয়ার্ক লালখাঁ, রামারবাগ, তক্কারমাঠসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে দেন ডালিম। এলাকার মানুষের কাছে পরিচয় পেয়েছেন ডিস ডালিম হিসেবে। গত ১৭ বছরে ডিস ব্যবসার আড়ালে ভ‚মিদস্যুতা, মাদক ও সন্ত্রাসের নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ডালিম। লালখাঁ, শিয়ারচর, রামারবাগ, লামাপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ১০টির অধিক বাড়ি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে সম্পদ গড়েছেন। একাধিক ব্যক্তি জানান, শামীম ওসমানের ডাকা মিটিংগুলোতে বিশাল জনসমাগম দেখানের চেষ্টা করতেন গিয়াস উদ্দিন ও আজমত আলী। সেই মিটিংগুলোতে লালখাঁ, রামারবাগ ও আশপাশের এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের জোর করে নিয়ে লোকারণ্য করার দায়িত্ব থাকতো ডালিমের উপর। এ জন্য তিনি বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন।

Islam's Group