News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২

ব্যাটারী চালিত রিকশার বৈধতায় নগরবাসীর ক্ষতি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৯:৪০ পিএম ব্যাটারী চালিত রিকশার বৈধতায় নগরবাসীর ক্ষতি

প্রতিটি মোটরযান সড়কে চলতে হলে লাইসেন্স বা পারমিট, রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ, বীমা সনদ প্রয়োজন হয়। এছাড়া দক্ষতা যাচাইয়ের পর চালককে নিতে হয় ড্রাইভিং লাইন্সেস। অথচ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ‘বৈধ’ ব্যাটারী চালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রে এসবের বালাই নেই। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদন নিয়ে অবাধে শহর দাপড়ে বেড়াচ্ছে ১৯ হাজার ৫০০টি বৈধ রিকশা। এর বাহিরে অগনিত ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা পুরো শহর জুড়ে চলছে।

নগরবাসী বলছে, বর্তমান প্রশাসন অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ, তারা অটোরিকশার বৈধতা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ক্ষতি করেছে।

শিল্প অধ্যুষিত এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা, নারায়ণগঞ্জ পৌর সভা ও কদমরসুল পৌরসভার ৭২ দশমিক ৪৩ বর্গ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস এই শহরে। এর বাহিরে শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরটিতে আরও অন্তত ৫ লাখ মানুষের প্রতিদিন যাতায়াত রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ৬০৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়ক রয়েছে। সাড়ে ১০ কিলোমিটার রয়েছে ফুটপাত।

শহরের অন্তত ১০ জন বাসিন্দা জানান, ‘শহরের মধ্যের অধিকাংশ সড়কের গুণগত মান ঠিক নেই। বর্তমানে সড়ক গাড়ি চলাচলের উপযোগী নয়, ফুটপাতে চলতে পারে না তারা।’

স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, নগরীতে নাগরীকদের নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিতের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সেখানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ১৯ হাজার ৫০০ টি রিকশার বৈধতা দিয়েছেন।

অটোরিকশার লাইসেন্স অনুমোদনের পরপরই প্রশাসনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম।

চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতা পরিবর্তনের সময় সাড়ে পাঁচ হাজার অটোরিকশার লাইসেন্স অনুমোদনের প্রস্তাব ছিল। পরে নগর পরিকল্পনাবিদের সুপারিশে সাড়ে চার হাজার লাইসেন্স দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ হাজারে পৌঁছায় এবং এখন তা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই লাইসেন্সের সংখ্যা বাড়ছে, যা শহরের ধারণক্ষমতার বাইরে।’

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরে ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা প্রবেশে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ছাত্রজনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর ক্ষমতায় আসে অর্ন্তরবর্তীকালিন সরকার। এরপরই গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জের অংশ হিসেবে ও শহরে যানজট নিরসনে ম‚ল শহরে অটোরিকশা চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করে জেলা প্রশাসন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। শহরের প্রবেশ পথগুলোতে অনুমোদনবিহীন অটোরিকশা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

অন্যদিকে, শহরে অবাধ প্রবেশাধিকার চেয়ে অটোরিকশা চালকদের আন্দোলন ছিল দীর্ঘদিনের। এর আগে চাষাঢ়ায় সড়ক অবরোধ ও নগর ভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মস‚চি পলন করেছে অটোরিকশা চালকরা। এর জেরেই ১২ মে অটোচালকরা নগর ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নগর ভবনে হামলা চালায় তারা। আহত হয় সিটি করপোরেশনের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বর ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টো পথে গাড়ি চালানোয় বাধা দেয়ায় নারায়ণগঞ্জে যানজট নিরসনের দায়িত্বেরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৮ জন শিক্ষার্থী।

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জে জনগণের ঘনত্ব বেশি, তার উপর রাস্তার পরিমান খুবই কম, নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাপটে অটোরিকশার বৈধতা দেওয়া একেবারেই ঠিক হয়নি। সিটি করপোরেশন কোন সুবিধা নিয়ে নিয়মের বাহিরে গিয়ে এসব রিকশার বৈধতা দিয়েছে। আমরা মনে করি- শহরে অটোরিকশা প্রবেশের অনুমোদন নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সমাধান হতে পারে কি

নিতাইগঞ্জ থেকে সাইনবোর্ড এবং শিমরাইল থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত দুই রুটে ইলেক্ট্রিক ট্রেন চালুর পরিকল্পনা ছিল সরকারের। পরবর্তীতে এই প্রকল্প কদমরস‚ল অঞ্চল অর্থ্যাৎ শীতলক্ষ্যার ওপারে সিটি করপোরেশনের বন্দর অঞ্চলে মদনগঞ্জ থেকে মদনপুর পর্যন্ত স¤প্রসারণ করার পরিকল্পনা ছিল। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে কোরিয়ান ও চায়নার ২টি সংস্থা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো। লাইন দু’টি বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন ১ লাখ ২০ হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করতে পারবে। এছাড়া শহরের মধ্যে (চাষাঢ়া থেকে ২নং রেল গেট, মন্ডলপাড়া, নিমতলী, মিনাবাজার, টানবাজার, ১ নং রেল গেট, সিরাজুদ্দৌলা সড়ক, মেট্টো হল হয়ে চাষাঢ়া পর্যন্ত) চক্রাকার গণপরিবহন সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। এতে দ্রুত যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব যা সাশ্রয়ীও হবে। উন্নত বিশ্বে আধুনিক নগরগুলোতে এ ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

Islam's Group