একে একে বের করে আনা হলো বাবা, মা তাদের একমাত্র সন্তানের লাশ। ৩৫ বছর বয়সী হাবিবুল্লাহ শিপলু তার স্ত্রী মোহনী আক্তার মিম ও ছোট্ট ছেলে আফরানকে নিয়ে থাকতেন শহরের বাবুরাইল বৌ বাজার এলকার পলাশ ভূইয়ার বাড়ির চার তলার পশ্চিম পাশের একটি ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের দারজা ভেঙে তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর যখন তাদের বস্তাবন্দি লাশ ঘর থেকে বের করে পুলিশ ভ্যানে তোলা হচ্ছিলো তখন পুরো এলাকা স্তব্ধ। বাড়ীর সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় বাসীন্দা, উৎসুক জনতা এবং প্রশাসনের সদস্যরাও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন শিশু আফরানের লাশের দিকে। সবার মনে একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল যে এই শিশুটি কি দোষ করেছিলো।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিপলু শহরের একটি আমের আড়ৎে কাজ করতেন। তবে এরআগে বৌ বাজারের আলোচিত রমজান আলীর সমিতির ম্যানেজার ছিলেন। সমিতির গ্রাহক সংখ্যা ছিলো প্রায় তিন হাজার। করোনাকালীন সময়ে রমজান আলীর সেই সমিতি বন্ধ হয়ে যায়।
অভিযোগ উঠে গ্রাহকদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে চলে যান রমজান আলী। তখন গ্রাহকরা শিপলুকে টাকার জন্য চাপ দিতো। তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে বলেও জানান অনেকে। এছাড়া তিনি নিজে কিছু টাকা ঋণ ছিলেন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।
অপর একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি শিপলুকে প্রভাবশালী কেউ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ অথবা হুমকি দিয়েছিলো। মূলত এসব কারণেই স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার পর নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি নিজে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
শিপলুর ভাই লাভলু বলেন, আমার ভাই কিছু টাকা ঋণ ছিলো। তবে তাদের এই অবস্থা কি কারণে হইসে তা জানিনা। আজকে সকাল থেকে তাদের খোঁজ পাচ্ছিলাম না। এসে দেখি দরজা ভেতর থেকে লাগানো। পরে পুলিশ খবর দিলে তারা এসে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। ভাইয়ের লাশ ঝুঁলছিলো ফ্যানের সাথে। ভাবি আর ভাতিজার লাশ পড়ে ছিলো বিছানায়। আমি আর কিছু বলতে পারছিনা।
হাবিবুল্লাহ শিপলু যেই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির এক ভাড়াটিয়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকেই বাসায় আইসা টাকার জন্য চাপ দিতো। আমি তো নিজে দেখি নাই। লোক মুখে শুনছি। বাচ্চাটা অনেক সুন্দর ছিলো। আসা যাওয়া করতো দেখতাম। অনেক ভালো লাগতো। কিন্তু কি হইলো কিছুই বুঝলাম না। সবাই বলতাছে বাবা বৌ আর ছেলেরে মাইরা আত্মহত্যা করছে। এখন সত্য ঘটনা কি ওইটা আল্লাহই ভালো জানে।
বৌজারের স্থানীয় বাসিন্দা তমাল আহম্মেদ বলেন, শিপলু দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় বসবাস করছে। আমরা ওরে চিনতাম রমজানের সমিতির ম্যানাজার হিসেবে। ওই সমিতির তো এখন কোনো হদিস নাই। সবাই বলে টাকা পয়সা রমজান আলী কিছু একটা করছে কিন্তু যারা টাকা পায় তারা এখন শিপলুরেই ধরে। ও বিষয়টি নিয়া অনেক দিন ধরেই চাপের মধ্যে আছে। আমাদের ধারনা এটার কারণেই এই ঘটনা। আর ঘর তো ভেতর থেকে বন্ধ ছিলো। কেউ মার্ডার করলে তো ভেতর থেকে বন্ধ থাকতো না।
আপনার মতামত লিখুন :