প্রায় সবসময় বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন নিজেকে দান-খায়রাতে ব্যস্ত রাখেন। বন্দর এলাকায় দান-দক্ষিণার মধ্যে দিয়ে নিজেকে দানশীল ব্যক্তি হিসেবে জাহির করেছেন। কিন্তু এই দান খায়রাতের আড়ালে মাকসুদ হোসেনের ভয়ঙ্কর লোভ ও সংকীর্ণতা যেন সাধারণ মানুষের অজানা। তার দ্বারা যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন একমাত্র তারাই জানে মাকসুদ হোসেন তার স্বার্থের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর। তিনি কতটা নিচে নামতে পারেন।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাকসুদ হোসেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকায় আলোচনায় রয়েছেন। সেই সাথে নিজেকে জনসাধারণের নজরে আনার জন্য তিনি নানাভাবে দান-খায়রাত করে যাচ্ছেন। নানাভাবে মানুষজনকে সহযোগিতা করে থাকেন। তার নির্বাচনী পথকে সহজ করার জন্য যে কারও সহযোগিতায় তিনি এগিযে আসেন। কিন্তু এই দান-খায়রাতের উৎস কি তা হয়তো অনেকেরই অজানা।
এরই মধ্যে মাকসুদ হোসেনের গোমর ফাঁস হতে শুরু করছে। মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর আলম বন্দর উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে গভীর নলকূপের কথা বলে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন। একই সাথে মার্কেটে দোকান দেয়ার কথা বলে ১ কোটি ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন তিনি।
মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর আলম বলেন, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন আমাকে দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা নির্বাচন করেছেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের পট পরিবর্তন হয়। এই পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে উনার চেয়ারম্যান চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলায় তিনি আসামী হন এবং তিনি জেল খেটেছেন। এই মাকছুদ হোসেন গভীর নলকূপের কথা বলে ১৪০০ থেকে ১৫০০ লোকের কাছ থেকে ১২ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এই নলকূপের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য আমি উনাকে বিভিন্নভাবে অনুরোধ করছি। কিন্তু উনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। তিনি এতকিছু দান করেন কিন্তু গরীবের টাকাগুলো দিচ্ছেন না। এই টাকার জন্য প্রয়োজনে আমি আইনের দারস্থ হবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লাঙ্গলবন্দ বাজারে সরকারিভাবে মার্কেট হয়েছে। কিন্তু এই মার্কেট কেন লিজ দেয়া হচ্ছে না? আমরা যতটুকু জানি এই সাবেক চেয়ারম্যান দোকান দেয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ লক্ষ করে মোট ১ কোটি ৬ লক্ষ টাকা তিনি নিয়েছেন। যারা লিগ্যালভাবে এখানে দোকান পাবে তাদের দোকান দিতে হবে। আর তিনি কিভাবে টাকা ফেরত দিবেন এটা তিনি এবং যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন উনার ব্যাপার। দোকান যেন তড়িৎ গতিতে বরাদ্দ দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এর আগে গত ২৯ জুলাই একটি সভায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সবিচ অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে এখন এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এই মুছাপুরের কুখ্যাত এই লোক যদি এমপি হয় বন্দর উপজেলা মাদকের হাট প্রতিষ্ঠিত হবে। তার ভয়ে ৫ আগস্টের পর মুছাপুরের মানুষ ঘুমাতে পারে নাই। আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়ি ঘরে লুটপাট করেছে।
তিনি আরও বলেন, তারা বাবা ছেলে মিলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে। বাবা ছেলে মিলে মাদক ব্যবসা করে। বাবা-ছেলে মিলে লুটপাট করে। তাদের বংশের ইতিহাস স্বাধীনতা বিরোধী ইতিহাস। অতএব স্বপ্ন দেখেছেন স্বপ্ন পর্যন্ত থাকেন। মসজিদ মাদরাসায় গিয়ে কিছু নগদ অর্থ দিয়ে বন্দর বন্দরের মানুষের মাথা কিনতে পারবেন না।
একই দিন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছিলেন, নির্বাচন করতে চায়। এমপি হওয়ার খায়েশ জাগছে। কোনো স্বৈরাচারের দোসর শেখ হাসিনার দোসর বন্দরের মাটিতে স্থান নাই। তার স্থান হবে জেলখানা। সময় সামনে আসবে। স্বৈরাচারের দোসররা যারা চোখ রাঙানি দিচ্ছেন তাদের স্থান হবে জেলখানা।
তিনি আরও বলেন, মাকসুদের বিরুদ্ধে অনেক বৈষম্যবিরোধী মামলা রয়েছে। সেই মামলায় আপনার স্থান হবে জেলখানায়। আমরা চেয়েছিলাম শান্ত থাকেন। আপনি এমপি হবেন এটা বন্দরের মানুষ মানবে না। যারা জুলাই বিপ্লব করেছে তারা কেউ জনগণের বাড়িতে আগুন দেয়নি। কিন্তু মুছাপুরের এই স্বৈরাচারের দোসর ৫ আগস্টের পরে জনগণের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বাড়িতে আগুন দিয়েছে। যাদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে আপনারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন তাকে আইনের আনা হবে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আর এই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য মাকসুদ হোসেন বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেন। বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় ও সাধারণ মানুষজনকে দানের মধ্য দিয়ে দানশীল বনে গিয়েছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :