নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলকে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর বহিস্কার করে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানের সাথে সখ্যতা থাকায় তাকে সহ ৫ জনকে বহিস্কার করা হয়। এর ঠিক দেড় বছর পর চলতি বছরের ২৯ জুন বন্দরের হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা মটরচালক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনের পক্ষে ঠিকাদারি কাজ চালু করতে গিয়ে গণপিটুনি শিকার হন আতাউর রহমান মুকুল। এ সময় তার পরিধেয় পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে দিগম্বর করে ফেলে তারা। তার এমন ঘটনায় প্রতিপক্ষ মধ্যে উচ্ছ¡াসিত দেখা গেলেও মহানগরের পদধারী নেতারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি বহিস্কৃত থেকে দিগম্বর করে পিটুনী শিকারে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা মুকুলের শয্যাপাশে দেখা গেছে। পুলিশের সামনে দিগম্বর করে গণপিটুনী প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে মুকুলের সমর্থিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি বিদ্রোহী গ্রুপ।
বন্দর থানা বিএনপি একাংশ নেতারা জানিয়েছেন, দলকে থেকে বহিস্কৃত হলেও মুকুলের এমন পিটুনীতে রাজনীতিতে ভবিষ্যতে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। আগামী যেন এমন না হয় সে কারণে মুকুলের পাশে দাঁড়িয়েছে অন্যান্য দলের নেতারা।
জানা যায়, বন্দরের হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ পান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা মটরচালক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন। তার পক্ষে ঠিকাদারি কাজ চালু করতে ২৯জন সকালে যান মুকুল। ওই সময়ে গাড়ী থেকে টেনে হিচড়ে ওসমান পরিবারের দোসর আখ্যা দিয়ে তাকে বেদম মারধর করে ডন বজলুর সমর্থকরা। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা মুকুলকে উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে ত্যাগ করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এমন ঘটনা পরপরই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি একাংশ নেতারা মুকুলের শয্যাপাশে দেখা যায়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইফসুফ খান টিপু তাকে দেখতে না গেলেও গণমাধ্যমে এমন ঘটনা নিন্দা প্রকাশ করেন। মুকুলের উপরে অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে পরদিন ৩০ জুন ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে তার সমর্থকরা। মদনপুর বাস স্ট্যান্ড ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক পুলিশ বক্সের সম্মুখে সড়ক অবরোধে মদনপর থেকে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা ও কাচপুর ব্রীজ পর্যন্ত বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার পথযাত্রী, এতে বিএনপি সমালোচনায় শিকার হন।
বন্দর বাড়ীতে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি, বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মাকসুদ হোসেন। গত ৪ জুলাই দেখতে যান জামায়াতে ইসলামী কর্ম পরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-বন্দর আসনের প্রার্থী মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, বন্দর উত্তর থানা জামায়াতের আমীর মাওলানা মুফতী আতিকুর রহমান, সেক্রেটারি জহুরুল ইসলাম, জামায়াত নেতা শফিউর রহমান অপু, আফসার উদ্দিন, জামান হোসাইন সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
অসুস্থ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান'কে দেখতে গিয়ে মঈনুদ্দিন আহমদ বলেন, অন্যায় যে-ই করবে,তার ফল ভোগ করতে হবে। নারায়ণগঞ্জে একজন গডফাদার ছিল, তিনি আজ পালিয়ে কোনোমতে জীবন রক্ষা করেছে। তার চারজন সহযোগী সদস্য ছিল, তাদের তিন জনের করুন মৃত্যু হয়েছিল। এটা ভুলে গেলে চলবে না, অন্যায়ের শাস্তি পেতেই হবে।
৬ জুলাই রাতে সন্ত্রাসী হামলায় আহত মুকুলের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে তার বাসায় যান ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মুকুলের দ্রæত আরোগ্য কামনা করে দোয়া করেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :