আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের পর বিএনপির রাজনীতিতে যখন নতুন গতি এসেছে, তখন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদল আছে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। কয়েক মাস আগেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করলেও এখন পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা হয়নি। এতে হতাশা বাড়ছে কর্মীদের মধ্যে, রাজপথে সক্রিয় ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা হয়ে পড়ছেন উপেক্ষিত। গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের ছাত্রদল কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বিলুপ্ত করা হয় উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, কলেজ ও ওয়ার্ড কমিটিসমূহও। ঘোষণার পর থেকেই প্রত্যাশা ছিল দ্রুতই গঠিত হবে নতুন নেতৃত্ব। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং সময় গড়ালেও সেই প্রক্রিয়া এখনো অর্ধেক পথেই।
আন্দোলনে অগ্রভাগে, অথচ উপেক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যখন বিএনপি দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রায় নিষ্ক্রিয়, ঠিক তখন রাজপথে ছাত্রদলই ছিল দলের মূল ভরসা। অবরোধ, হরতালসহ কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি নারায়ণগঞ্জে সফল করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পুলিশের গুলি, মামলা, গ্রেপ্তার আর নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে তারা মাঠে ছিলেন বুক চিতিয়ে। অনেকে কারাবরণও করেন, অনেকে বাড়িছাড়া হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। তবু সেই সাহসী কর্মীরাই এখন দলীয় আনুষ্ঠানিকতা ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ধীরগতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। মাঠের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আন্দোলনের সময় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁরাই যেন ভবিষ্যতের নেতৃত্বে আসেন। এটাই তাদের প্রত্যাশা।
বদলাচ্ছে ছাত্রদলের কাঠামো
আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে কেন্দ্র। ১৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল থেকে তিনজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাÍসজীব মজুমদার (সহ-সভাপতি), আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও সাইফুল আলম বাদশাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জে উপযুক্ত নেতৃত্ব খুঁজে বের করার জন্য। তারা মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে এমন একটি তালিকা তৈরি করবেন যা নেতৃত্বের গুণাবলি, জনপ্রিয়তা এবং ত্যাগের মানদÐে উত্তীর্ণ হবে। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সেই তালিকা বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত কমিটি ঘোষণা করবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এবার ছাত্রদলের রাজনীতিকে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। অন্ধ আনুগত্য বা তদবিরভিত্তিক নেতৃত্ব নয়, মাঠে যাঁরা ছিলেন, যাঁদের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ আছেন, তাদেরকেই সামনে আনা হবে।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ে কৌশলগত পরিকল্পনা:
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদল নিয়ে চারটি বিষয় মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রথমত, ছাত্রদলের রাজনীতির ধরণে আমূল পরিবর্তন আনা হবে, যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে দলটি গ্রহণযোগ্য হয়। দ্বিতীয়ত, ৫ আগস্টের সরকার পতনের আন্দোলনে তরুণদের বিপুল ভ‚মিকা ছিল। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে ছাত্র রাজনীতিতে তরুণদের সক্ষমতা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, বিএনপির প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রদলের অগ্রণী ভূমিকা থাকে। তাই আগামী নির্বাচনেও তাদের ভরসাযোগ্য সংগঠনে রূপান্তর ঘটাতে কেন্দ্র কাজ শুরু করেছে। চতুর্থত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা ছাত্রদলের নেতৃত্বে থাকবেন, তারা যেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও অধিকার নিয়েই রাজনীতি করেন, এমন কাঠামো নিশ্চিত করা হবে।
পুরনো কমিটির প্রেক্ষাপট :
২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।জেলায় সভাপতি হন নাহিদ হাসান ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু। মহানগরে সভাপতি হন রাকিবুর রহমান সাগর, সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইসতিয়াক সিকদার। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন সুলতান মাহমুদ, সাগর সিদ্দিকী, আতা ই রাব্বি, জাকারিয়া ভূঁইয়া, আমিনুল ইসলাম, আবু তাহের রিফাত, মেহেদী হাসান দোলন, শাহাজাদা রতন, আজিজুল ইসলাম রাজিব, ওসমান প্রীতম এবং মো. রাসেল।তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তা বাতিল করা হয়।
মাঠের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা :
দীর্ঘদিন নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এমন মত নেতাকর্মীদের। তাদের দাবি, যারা আন্দোলনে ছিলেন, যারা সত্যিকারের ছাত্র রাজনীতি করেন, তাদের মূল্যায়ন করেই যেন কমিটি হয়। তাদের মতে, কেবল নামধারী ছাত্র নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও সচেতন যুবদেরকেই সামনে আনলে দল সুসংগঠিত হবে। রাজপথে সাহসী নেতৃত্ব দেখানো ছাত্রদল এখন কেন্দ্রের দিকে চেয়ে আছে। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গেলেও নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের কমিটি এখনো আগের জায়গাতেই আটকে। নেতৃত্বের সংকট দূর করে দ্রুত একটি শক্তিশালী, গ্রহণযোগ্য এবং মাঠকর্মী ভিত্তিক কমিটি চাই। এটাই এখন নারায়ণগঞ্জের রাজপথে ছাত্রদলের প্রধান দাবি।
আপনার মতামত লিখুন :