বার বার চমকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাকে বহিস্কারের পর দায়িত্বপান সাবেক এমপি। তাকেও বিলুপ্ত করেও সাবেক সদস্য সচিবকে জেলা বিএনপির পাচঁ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক করে কেন্দ্র। দেড় মাসের মাথায় ৩৩ সদস্য কমিটি করা হলে স্থবিরতা হয়ে রয়েছে জেলা বিএনপি।
আহবায়ক মামুন মাহমুদ ও এক নম্বর সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন একে অপরের বিরোধীতা থাকায় জেলা বিএনপি থেকে নিজের নির্বাচনী এলাকায় তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। যার কারণে যুগ্ম-আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও মাসুকুল ইসলাম রাজীব নেতৃত্বে জেলা বিএনপি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এদিকে যুগ্ম আহবায়খ শরীফ আহমেদ টুটুল এবং সদস্য সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। নতুন করে কমিটিতে সদস্য হন, আজহারুল ইসলাম মান্নান, গোলাম ফারুক খোকন, লুৎফর রহমান আবদু, অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন, মো. ইউসুফ আলী ভূঁইয়া, শহিদুল ইসলাম টিটু, মাজেদুল ইসলাম, মো. মোশারফ হোসেন, আশরাফুল হক রিপন, মজিবর রহমান ভূঁইয়া, মুশকাত আহমেদ, শাহজাহান মেম্বার, শামসুল হক মোল্লা, মো. বাছির উদ্দিন বাচ্চু, অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া, তাসিকুল হক ওসমান, মো. জুয়েল আহমেদ, মাহমুদউল্লাহ, একরামুল কবির মামুন, মো. সিরাজুল ইসলাম, আনোয়ার সাদাত সায়েম, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, রহিমা শরিফ মায়া, মো. অকিল উদ্দিন ভূঁইয়া, সেলিম হক রূমি, মো. নূরনবী ভূঁইয়া, নাদিম হাসান মিঠু ও হামিদুল হক খান।
এদের মধ্যে জেলা বিএনপি অধিনে থানা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক পদে রয়েছেন। এদিকে জেলা বিএনপি আহবায়ক মামুন মাহমুদ ও এক নম্বর সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের মধ্যে রাজনীতি বিরোধীতা কারণে আহবায়ক কমিটিতে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৭ জুন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও গোলাম ফারুক খোকন। তবে, দেড় বছরেও এই দুই নেতা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি। পরে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দল। গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগে এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে কেন্দ্র সূত্র জানা যায়। বিলুপ্তির দেড় মাস পর গত ২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি গঠনের দেড় মাস পর ২৪ মার্চ ৩৩ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
আহবায়ক মামুন মাহমুদ বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ হচ্ছে, দলের কর্মসূচিতে সমাজ ও মানুষকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী গরীব ও দুস্থ মানুষের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ওষুধ ছিটানোসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এখন আমাদের লক্ষ্য নির্বাচনের দাবিতে কাজ করা। দেশ যাতে গণতন্ত্রের পথে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে পারে, সেই লক্ষে কাজ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ৩৩ সদস্য নেতাদের মধ্যে নীরব বিরোধীতা থাকায় জেলা বিএনপি কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। যার কারণে দুই যুগ্ম আহবায়ক নেতৃত্বে বর্তমান চলমান দেখা যায়। এদিকে জেলা বিএনপির সাথে থানা উপজেলা নেতাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে কেন্দ্রে জেলা বিএনপি গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রবীনদের দায়িত্ব দেয়ার জন্য ইঙ্গিত পড়েছে। থানা উপজেলা বর্তমান নেতাদের একত্রে রাখার জন্য জেলা বিএনপির সাবেক নেতাদের নাম কেন্দ্রে আলোচনা শুরু হয়েছে।
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর জেলা বিএনপি আহবায়ক তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিস্কার করা হয়। এরপর থেকে জেলা বিএনপি একক নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে নেতা হারিয়ে যায়। কয়েক মাস পর সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন জেলা বিএনপি আহবায়ক ও সভাপতি হলেও তার প্রতিপক্ষ শক্ত অবস্থা ফলে দেড় বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। এ অবস্থা মধ্যে গত বছর শেষ সময়ে বিলুপ্ত করা হয় গিয়াস-খোকনের কমিটি।
তৈমূর আলম খন্দকারের পর মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হয়ে উঠতে পারেনি। এর সূত্রে ধরে এখনো জেলা বিএনপি আহবায়ক মামুন মাহমুদ একই অবস্থায় রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও মামুন মাহমুদের তোড়জোড় রয়েছে। যার কারণে জেলা বিএনপি কার্যক্রমের কচ্ছপ গতি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে নেতা-কর্মীরা দেখছেন। এমপি প্রার্থী নেতাদের জেলা বিএনপি কমিটি না রাখার আওয়াজ উঠেছে এবার কেন্দ্রে।
আপনার মতামত লিখুন :