নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের সন্দেহভাজন জেলা যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম ভূইয়া পারভেজ গুমের পেছনে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের হাত রয়েছে মনে করছেন অনেকে। আলোচিত এ ঘটনার রহস্যের জট খোলেনি ১২ বছরেও। পারভেজ গুমের পরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল নারায়ণগঞ্জ। সড়ক অবরোধ থেকে শুরু করে আলটিমেটামও দিয়েছিলেন আওয়ামীলীগের নেতারা। শামীম ওসমানতো রাজনীতি ছেড়ে দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পারভেজ গুমের পরে তার পরিবারের লোকজন বেশ কিছুদিন সক্রিয় থাকলেও এরপর থেকে তারাও নিস্ক্রিয়। তাকে যেন ভুলে গেছে আওয়ামীলীগের নেতারা। এমনকি গত ১২ বছরে পারভেজ গুমের বিষয়ে নিরব ভূমিকায় দেখা যায় শামীম ওসমানসহ আওয়ামীলীগ নেতাদের। গুম হওয়া সেই পারভেজ আদৌ বেঁচে আছে নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে কিংবা তার অবস্থান কী তা এখনো রহস্যাবৃহত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের পিতা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির দেয়া খুনীদের অবগতি পত্রে যুবলীগের ক্যাডার জহিরুল ইসলাম ভূইয়া পারভেজ এর নাম ছিল। এরপর ২৮ এপ্রিল চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের একটি অনুষ্ঠানে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ক্যাঙ্গারু পারভেজ। সেদিন তাকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা। এরপর থেকেই অনেকটা আত্মগোপনে ছিল পারভেজ। ত্বকী মঞ্চের উপর হামলার পরেই পারভেজকে জেলা যুবলীগের কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
এরপর ৬ জুলাই পারভেজ ও তার স্ত্রী সোহানা ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের দিকে আসছিলেন। গুলশানের ২নং সেক্টরে গাড়িটি আসা মাত্র একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে আসা ১০-১২ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি গাড়িটি গতিরোধ করে। তখন ব্যক্তিরা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে পারভেজকে তার গাড়ি থেকে নামিয়ে ওই মাইক্রেবাসে তুলে নেয়। এর পর থেকেই পারভেজ নিখোঁজ রয়েছে। ওইদিন রাতেই নারায়ণগঞ্জে কয়েক ঘন্টা সড়ক অবরোধ রাখে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। পারভেজ গুমের পরে এমপি শামীম ওসমান ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। রাজনীতি ছেড়ে দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। এছাড়া জাতীয় সংসদেও পারভেজের সন্ধান দাবি করে বক্তব্য রেখেছিলেন শামীম ওসমান।
ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পারভেজের স্ত্রী খুরশীদ জাহান সোহানা বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় প্রধান আসামী করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানকে। মামলার অন্য আসামীরা হলো, মেয়র আইভীর ছোট ভাই নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আলী রেজা উজ্জ্বল, আইভীর মামাতো ভাই চিত্র শিল্পী রেজাউল ইসলাম রনি, আইভীর ভাগ্নে এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল কাদিরের ছেলে মিনহাজুল কাদির ওরফে মিমন, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত রোকন উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে ব্যবসায়ী কারমেল, বিএনপি নেতা মাহবুব উল্লাহ তপন, মহানগর বিএনপির নেতা ও সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম ওরফে শকু। এরপর ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারী ঢাকা ডিবি পুলিশ নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় খেয়াঘাট এলাকা থেকে আবু সুফিয়ান, তার দুইজন সহযোগি কমল ও সাখাওয়াতকে আটক করার পর তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল আহম্মদ আলী রেজা উজ্জল, আইভীর মামাতো ভাই চিত্র শিল্পী রেজাউল ইসলাম রনি, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল কাদিরের ছেলে মিনহাজুল কাদির ওরফে মিমন, জেলা কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে কারমেল ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে আদালতে প্রেরণ করে। দীর্ঘ প্রায় এক মাস কারাভোগের পর তারা জামিনে বেরিয়ে আসে।
২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। ওইদিন তিনি তার মনের কথাগুলোতে ইংরেজি অক্ষরে লিখেছিলেন। নিজের টাইমলাইন থেকে শামীম ওসমানের সব ছবি সরিয়ে ফেলেছিলেন। ওই পোস্টে আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার পোস্ট দিয়েছিলেন।
পারভেজের পোষ্টের লেখাগুলো বাংলায় তুলে ধরা হলো। পারভেজ লিখেছিলেন, ‘অনেক কষ্ট হচ্ছে আজ আমার-টানা ঘন্টার পর ঘন্টা-চোখে পানি আসেনি-আজ কিছুই ভাল লাগছেনা। কে আমি? কেনো আমি? বহু চিন্তা করে বের করতে পারলাম না- নিজের জন্য কি করেছি? আজ একজনের একটা কথা খুব মনে পড়ছে-নারায়ণগঞ্জ এ ২টা ---- আছে- আই স্যালুট ইউ-নিজের জন্য ভাবা জানিনা শিখতে পেরেছি কিনা? আমার টাইমলাইন থেকে অনেক কষ্ট হচ্ছে-শামীম ভাইয়ের ছবি আমি সরিয়ে ফেললাম- স্কুল জীবন থেকে আজ পর্যন্ত তোমরা যারা যারা আমার সাথে যা করেছো তোমরা তা জানো-শুধু ভাই জানে না-অনেক খারাপ হয়ে যেতে পারতাম হইনি- আমার রক্ত খারাপ না- ধান্দা পারভেজ করেনা- আল্লাহর- দেয়া রহমত আমার কাছে-কোনদিন বড়াই করিনি-তোমরা জেলাস করো- এখন খুনি বানালা-জ্বালা তোদের প্রজন্ম মঞ্চ,এনটোয়েন্টিফোরসেভেন-ওকে-জীবন একটাই-বিবেকের কাছে-পরিস্কার আছি-মানুষের কাছে যা বানানো হয়েছে-কেয়ারটেকার অউনার/কম্পিটিটার চেষ্টা-আল্লাহ আছেন-কতদিন বাঁচবো? কত বছর? মুক্তিযুদ্ধ না করার আফসোস যার কাছ থেকে পেয়েছি-অনেক বললাম-ইউ অল আর বাস্টার্ড অলসো-জেনে রাখো সাংবাদিক-তাদের আমি গালি দিবনা জাস্ট ওয়েট কর বাস্টাডেরা-আমার জীবনের উপর দিয়ে তোরা যা করলি যারা আমাকে ততটুকু জানো-আজকে এই মুহুর্তে যখন পোস্টটি সেন্ড হবে-আমার যেকোন কাজের ব্যাপারে আমি ছাড়া অন্য কেউ কিছু জানে না দায়ী না-আমার যেকোন পদক্ষেপ এর জন্য জামাত বাম যে কুত্তারা বেআইনীভাবে আমাকে কোটি কোটি বার খুনী বললি সমাজে কি বানালি? আজ থেকে আমি আন্ডারগ্রাউন্ডে-আমি হিজরা না-আমার কাছে ইজ্জত আগে-মরন না-সবার আগে মরবো এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে থামলাম-বাস্টার্ডস-নাউ সি-দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।
আপনার মতামত লিখুন :