প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের নামে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি রয়েছে দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা। ২০০৮ সাল থেকে টানা এই আসনটি দখলে রেখেছে আওয়ামীলীগ। ২০০১ সালে বিএনপি নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো কোন প্রার্থী জয়ী হতে পারেনি। ২০০৮ সালে বিএনপি প্রার্থী অল্পভোটে ব্যবধানে পরাজিত হলেও ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ আসনটি বিএনপি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে নেতাদের। লন্ডনে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর জামায়াত-বিএনপি-এনসিপি যৌথ সভা হয়েছে। সেখানে আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে একাধিক আলোচনা চলমান রয়েছে। যার ফলে জোটের প্রার্থী দেয়া হলে হেভিওয়েট প্রার্থী কার কপালে জুটবে মনোনয়ন সেটা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, শিল্পপতি শাহআলম, জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল আমিন, জমিয়তে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলা আহবায়ক মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী ও ইসলামী আন্দোলনের মুফতি ইসমাঈল সিরাজী। এছাড়া আরো অনেক দলের মধ্যে প্রার্থীদের তোড়জোড় থাকলেও নির্বাচনের তফসিলের আগে পরে বুঝা যাবে তাদের পরিচয়।
আবদুল জব্বার
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রশিবির’ কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি। এরপর তিনি ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি সম্মেলনে ২২ থেকে ২৪ জানুয়ারি সারাদেশে ভোটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন। মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার এর আগে ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, প্রকাশনা সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম মহানগরী দক্ষিণ ও উত্তর শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। ২০২৪ সালের ২৯ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি নির্বাচিত মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার। এর আগে তিনি জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামী ফেসবুকের এক পোষ্টে নারায়ণগঞ্জের পাচঁটি আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোনয়ন পান তিনি। মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী প্রচারণা করেছেন। একই সাথে মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর শাখার নেতা-কর্মীরা আওয়ামীলীগ সরকার পতন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
গিয়াসউদ্দিন
৮০ দশকে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে বীরমুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সক্রিয় হন। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়নের সন্তান এক সময় এই ইউপি ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯০ সালে ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন গিয়াসউদ্দিন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনের অল্প কিছুদিন আগে বিএনপিতে যোগ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য রয়েছেন। এর আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি, আহবায়ক, সিনিয়র সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১/১১ সরকার আমলে তাকে কোনঠাসা রাখার কারণে দলীয় মনোয়ন পাননি। তার বদলে এক শিল্পপতিকে বিএনপি মনোনয়ন দিলে অল্প ভোটে ব্যবধানে আসনটি হাতছানি হয় বিএনপির। বিগত ১৬ বছর আওয়ামীলীগ টানা ক্ষমতা থাকাকালে বেশিভাগ সময়ে তিনি নিস্ক্রিয় ছিলেন। ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর হঠাৎ জেলা বিএনপি আহবায়ক হয়ে রাজপথে নামেন। ছয় মাসের ব্যবধানে সম্মেলন আয়োজন করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেড় বছরের মাথায় কমিটি বিলুপ্ত করেন কেন্দ্র। এক মাস পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আংশিক কমিটিতে তাকে সদস্য হিসেবে রাখেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
শাহআলম
২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মোহাম্মদ শাহ আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ২ হাজার ১০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ক্লিন ইমেজে এই ব্যবসায়ীকে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে বাদ দিয়ে নমিনেশন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। পরাজিত হওয়ার পর বিএনপি নারায়ণগঞ্জ জেলার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন মোহাম্মদ শাহ আলম। আওয়ামীলীগ সরকার টানা ক্ষমতা থাকায় মামলায় গ্রেপ্তার আতংকে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে এই পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় বলে পদত্যাগ করেন।
মনির কাশেমী
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হঠাৎ নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লার সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের প্রার্থী হন। এতে ওই সময়ে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়। তৎকালীন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শিল্পপতি শাহ আলম ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে বাদ দিয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল প্রার্থীকে ধানের শীষে ঘোষণা করায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রকাশ করেন। বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীই মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী সম্পর্কে ভাল করে জানেন না। কোনও আন্দোলন সংগ্রামেও তাকে রাজপথে দেখা যায়নি বলে তাদের দাবি। এলাকায় অপরিচিত মনির হোসেন কাসেমীকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ায় জেলা বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা ওই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হন। এই মনোনয়ন বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এসব নেতা-কর্মী। মনির হোসেন কাসেমীকে ভোটের মাঠে দেখা যায়নি এবং কোনো ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেননি। নির্বাচনের চার দিন আগে অসুস্থতার অজুহাতে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
আল আমিন
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সূত্র নিয়ে গত ৭ মার্চ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৫০জন নেতা নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেখানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আব্দুল্লাহ আল আমিনের নাম প্রকাশ হলে আলোচনা সৃষ্টি হয়। এর কয়েকদিন পরই ২০ এপ্রিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যদের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি নতুন শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-আমিনকে এই কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে আলোচনা আছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। কমিটি গঠনের অনুমোদন দিয়েছেন দলের আহবায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন। এরপর গত ২ জুন নারায়ণগঞ্জে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়েছে। একই সাথে জেলার ৩টি উপজেলার সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে দলটি। জেলা কমিটিতে আব্দুল্লাহ আল আমিনকে প্রধান সমন্বয়কারী ও আহমেদুর রহমান তনুকে যুগ্ম সমন্বয়কারী রেখে ৩১ সদস্যের কমিটি প্রণয়ন করা হয়।
মুফতি ইসমাইল সিরাজী আল মাদানী
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট ওয়ায়েজ, ব্যবসায়ী, দানশীল, সমাজসেবক জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানার কাশিপুর ইউপির ভোলাইল আল আকসা জামে মসজিদের ১৭ বৎসরের খতিব, ফতুল্লা পঞ্চবটি তারতীলুল কোরআন মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, ২০১৩ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর ও নায়েবে আমীরের নির্দেশে রাজপথে থেকে সক্রিয়ভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নারায়ণগঞ্জ- ৪ এ মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপ‚র্ণ ভ‚মিকা রেখে চলছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্দিরগঞ্জ) এর প্রতিটি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :