গত কয়েক সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ এবং বন্দরে একাধিক বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম বিএনপির নেতৃবৃন্দরা। এরমধ্যে সংঘর্ষ, খুন, পাল্টা খুন, হামলা চালিয়ে প্রতিপক্ষকে দিগম্বর করে দেওয়া সহ রাজনৈতিক নেতাদের মারধরের মত ঘটনা ঘটেছে। যার কোনটাই শোভনীয় ছিলনা। প্রতিটি ঘটনায় সাথে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত থাকলেও শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোন থেকে দায় চেপেছে রাজনৈতিক দল বিএনপির উপরে। সব শেষ ৭ জুলাই শহরের চাষাঢ়া এলাকায় একটি দোকানের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারে পরিচালক ও জামায়াত নেতা গোলাম সারোয়ার সাঈদকে মারধর করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা শওকত হাশেম শকু এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন রানার উপস্থিতিতে সাঈদের উপর হামলা চালানো হয়।
চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মসজিদ সংলগ্ন পৌর মার্কেটের ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছনার শিকার গোলাম সারোয়ার সাঈদ জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া বিগত সময়ে জুলাই আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থান আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকাতে ছিলেন। তিনি একাধিকবার কারাবরণ ও কয়েক ডজন মামলার আসামি ছিলেন।
জানা গেছে, চাষাঢ়ায় পৌর মার্কেটের একটি দোকান নিয়ে কয়েকদিন ধরেই মালিকানা বিরোধ ছিল। আশিকুর রহমান নামের একজন দোকানের মালিক দাবি করলেও সাঈদের দাবি তিনি নিজেও ওই দোকানের মালিক। এ নিয়ে মামলা ছিল এবং তিনি মামলায় জয়ী হয়েছেন। আশিকুরের পেছনে কাজ করছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা।
৭ জুলাই দুপুরে সাঈদ ওই দোকানে গিয়ে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। খবর পেয়ে সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুর অফিসে থাকা জুলহাস ছুটে এসে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে শকু ঘটনাস্থলে আসলে তার সঙ্গে সাঈদের বাকবিতন্ডা ঘটে। একই সময়ে ছুটে আসেন রানা। তাদের উপস্থিতিতে সঙ্গে থাকা লোকজন সাঈদের উপর হামলা চালিয়ে কিল ঘুষি ও বেধড়ক মারধর করতে থাকে।
হামলার শিকার নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের পরিচালক ও সাবেক শিবির নেতা গোলাম সারোয়ার সাঈদ বলেন, “ওই দোকানের পুরো জায়গার মালিক আমি। আমি সব আইনী প্রক্রিয়া মেনেই সব করছিলাম। কিন্তু তারা আমার উপর যে আঘাত করেছে এ বিষয়ে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা বলেন, হঠাৎ খবর পাই বুলডেজার দিয়ে দোকান ভেঙ্গে ফেলছে। সে যদি এভাবে গায়ের জোরে সব দখল করে নেয় তা তো কাম্য না। আর আমরা তাকে কোনো আঘাত করি নাই।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বলেন, খবর শুনে আমি সাবেক কাউন্সিলর হিসেবে ঘটনাস্থলে যাই। তাকে বলি আপনার কাছে যদি এই জমির মালিকানা থাকে তাহলে আপনি আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোকানের দখল নিতেন। তিনি কয়েকজনের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার উপস্থিতিতে শিবিরের সাবেক সভাপতিকে লাঞ্ছিত করার এই ঘটনা ব্যক্তিগত স্বার্থে হলেও সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে এসব বিএনপির লোকজন ঘটিয়েছে বলেই দায়টা দলের উপর গিয়ে বর্তায়।
অন্যদিকে, গত ২৯ জুন বন্দরে দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলের উপর হামলা চালিয়ে তাকে দিগম্বর করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাকে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দালাল বলেও আখ্যায়িত করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের নেতার টেন্ডারে বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলে যান বলে অভিযোগ উঠে। এ সময় তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পাঞ্জাবি পায়জামা ছিড়ে দিগম্বর করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় হামলার শিকার আতাউর রহমান মুকুল সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি বজলুর রহমান ওরফে ডন বজলুর দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেন। এ ঘটনায় তিনি ডন বজলুকে প্রধান আসামি করে বন্দর থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছেন।
এই ঘটনাটিতেও ব্যক্তিগত স্বার্থে ঘটে থাকলেও শেষ অবদি উভয় পক্ষ বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে বিএনপি সমালোচিত হয়েছে।
এর আগে ২১ জুন বন্দর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এতে আলাদা দুটি হত্যা মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাবেক বর্তমানকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর ও বহিস্কৃত নেতা হান্নান সরকার সহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, বন্দর রেললাইন, হাফেজীবাগ ও সালেহনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার ও বাবু শিকদারের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশার পক্ষের জাফর-রনিদের দীর্ঘদিন ধরে দ্ব›দ্ব চলছিল। এ ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এখানেও ব্যক্তিগত স্বার্থে দ্বন্দ্বে জড়িত উভয় পক্ষই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির নেতাকর্মীরা বর্তমানে ব্যক্তিগত স্বার্থে একে অপরের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে মব সৃষ্টি করছে। অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা সহ নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও লাঞ্ছিত করছে। এতে করে সকল দায় নিজেদের রাজনৈতিক দল বিএনপির উপর বর্তাচ্ছে। কিন্তু এসব ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অপকর্মের বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি নিজ দলের নেতাকর্মী তারেক রহমানের বার্তা পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করলেও এসব বিষয় নিয়ে কর্নপাত করছে না বিএনপির নেতাকর্মীরা।
আপনার মতামত লিখুন :