News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

স্বৈরাচারের তিলক নিয়েই মাঠে সরব মাকসুদ


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম স্বৈরাচারের তিলক নিয়েই মাঠে সরব মাকসুদ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) এলাকায় সরব রয়েছেন মাকসুদ হোসেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি প্রতিনিয়তই নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যার কপালে রয়েছে স্বৈরাচারের তিলক। যে স্বৈরাচারকে হঠাতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা রক্ত জড়িয়েছে।

অথচ এই স্বৈরাচার সরকারের এমপিদের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রেখে তাদের শরিক দল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়ে জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করেছেন এই মাকসুদ হোসেন। আর এই স্বৈরাচারের তিলক নিয়েই মাকসুদ হোসেন সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্বাচনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে।

সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ পতন হয়। আর এই পতনের পর থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা সরগরম হয়ে উঠে। সেই সাথে দিন যাওয়ার সাথে সাথে আলাপ আলোচনা আরও বেশি সরগরম হয়ে উঠে। বিভিন্ন মহলে নির্বাচন নিয়ে নানা আলাপ আলোচনা সরব হয়ে উঠে।

এরই মধ্যে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দলে পুরোদমে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখন মাঠে ব্যস্ত গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা আর এলাকার ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ে। যার ধারাবাহিকতকায় নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) এলাকায় মাকসুদ হোসেনও সরব রয়েছেন।

অথচ এই মাকসুদ হোসেন দীর্ঘসময় আওয়ামী লীগ সরকারের এমপিদের সাথে সম্পর্ক রেখে রাজনীতির মাঠে সরব ছিলেন। আওয়ামী লীগের সরকারের এমপিদের সাথে সম্পর্ক রেখে তাদের শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত হয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। তাদের সাথে মাকসুদ হোসেনের ঘনিষ্টতাও ছিলো। সবশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন মাকসুদ হোসেন।

সেই সাথে গত ৪ মার্চ দিবাগত রাতে বন্দরের বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের অংশ হিসেবে মাকসুদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে শিক্ষার্থীর উপড় হামলার অভিযোগ রয়েছে।

তবে এসকল মামলায় হাইকোর্ট থেকে মাকসুদ হোসেন জামিন লাভ করেছেন। আর জামিন পেয়েই তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকায় সরব রয়েছেন। এলাকায় বিভিন্নভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে ওসমান পরিবার ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন এই মাকসুদ হোসেন। ওসমান পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক রেখে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওসমান পরিবারের ক্ষমতাবলে নানা অপকর্মের সাথেও অভিযুক্ত হয়েছেন এই মাকসুদ হোসেন।

তবে বন্দরের গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ওসমান পরিবারকে চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন মাকসুদ হোসেন। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওসমান পরিবার ঘনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা এম.এ রশীদকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। এই কারণে তার উপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। জুলাই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে হওয়া সরকারবিরোধী মামলায়ও তখন আসামি করা হয়েছিল মাকসুদ হোসেনকে।

আর এই বিরোধীতাকে পুঁজি করে নিজেকে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় রয়েছেন। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তবে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ও তাদের অনুসারীরা মাকসুদ হোসেনকে মেনে নিতে একেবারেই নারাজ। কিন্তু বিএনপির এই নারাজিকে কোনো রকম পাত্তা না দিয়েই নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন মাকসুদ হোসেন।

তার আগে গত বছরের ২০ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো তৎকালিন বন্দর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনকে। উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন শেষে মাকসুদ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছিলেন।

দ্বিতীয় স্ত্রী সুলতানা বেগম গত ২০২৪ সালের ২৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মাকসুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে সুলতানা অভিযোগ করেন, ১৯৯৮ সালে মাকসুদ হোসেন তাঁকে বিয়ে করেন। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। কিন্তু বিয়ের সময় প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখেছিলেন মাকসুদ। সুলতানা বেগম বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে বাড়িতে তোলার জন্য চাপ দেন। কিন্তু মাকসুদ তাঁর কথা শোনেননি। উল্টো বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া সম্পত্তি বিক্রির জন্য স্ত্রীকে তিনি চাপ দেন।

তবে এই পুরো ঘটনা পিছনে প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে অভিযোগ ছিলো মাকসুদ অনুসারীদের। সেই সাথে দীর্ঘদিন কারাভোগ শেষে তিনি জামিন লাভ করেছিলেন। একই সাথে তিনি এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

Islam's Group