আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির মহাজোটের সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী বন্দর উপজেলা ও মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের বিরুদ্ধে চটেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি। জেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি এই নেতার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ছিলেন। গত ৫ মার্চ ফতুল্লা থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলায় বন্দরে এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাকসুদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের সঙ্গে মাকসুদ হোসেনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তিনি সেলিম ওসমানের সহায়তায় একাধিকবার বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সবশেষ গত বছর ৮ মে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করলেও গত ১৯ আগষ্ট তাকে অপসারণ করেন অন্তবর্তী সরকার। এক মাসের ব্যবধানে ১১জুন উপজেলা দায়িত্ব নেয়, এর দশদিনের মাথায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি ছিলেন মাকসুদ হোসেন। প্রথম স্ত্রীর করা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেন নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উম্মে সরাবন তহুরা আদালত।
১৭ বছর পর বন্দর উপজেলা মুছাপুর ইউনিয়নে মার্টিতে দাড়িয়ে মাকসুদ হোসেনের রাজ্যে এক হাত নিয়ে যাচ্ছে মহানগর বিএনপি আহবায়ক কমিটি। রাতের ভোটে এমপি নির্বাচিত করিয়ে দেয়ায় পুরস্কৃত হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন বলে মন্তব্যে করেছেন বিএনপি নেতারা। একই সাথে মুছাপুরে গ্যাসের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা আসামী হয়েও মাকসুদ হোসেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী তোড়জোড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া করেছেন। ৫ আগষ্টের পর মাকসুদ ও তার ছেলে নেতৃত্বে জনগণের বাড়িতে আগুন দিয়ে লুটপাট করা নিয়ে সমালোচনা করেছেন বিএনপি পদধারী নেতারা।
গত ২৫ ও ২৯ জুলাই মুছাপুর মার্টিতে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে বিএনপি নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচীতে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মাকসুদ হোসেনকে এক হাত নিয়ে নেন। ওই সময়ে ওসমানদের দোসর হিসেবে তাকে আখ্যা দিয়ে একাধিক মন্তব্যে করেন।
মাকসুদ চেয়ারম্যান এখন আবার নির্বাচন করতে চায় এমপি হওয়ার স্বাদ জাগছে। শেখ হাসিনা, সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের দোসর তাকে বাংলার মাটি তথা বন্দরের মাটিতে কোন স্থান নাই। তাদের স্থান হবে ওই জেলখানায় এমন মন্তব্যে করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। এই মাকসুদ ফ্যাসিবাদী দোসরদেরকে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিতে পারি না। মাকসুদ চেয়ারম্যান সে বেশ কয়েকটি বৈষম্য বিরোধী হত্যা মামলার আসামি। সে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র হত্যাকারী। সেই মাকসুদকে আমরা কোনো রকমই বন্দরের মাটিতে নির্বাচন করতে দিতে পারি না।
মুছাপুর মার্টিতে দাড়িয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন বলেছেন, বিগত ১৫টি বছর বন্দরের মানুষ ভালো ছিল না। সেলিম ওসমানের শাসন আমলে বন্দরকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেছিলেন মাকসুদ। বন্দর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা সেলিম ওসমানের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। গত ৫ আগস্টের পরই ওই স্বৈরাচারের দোসর মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে শুভ নেতৃত্বে জনগণের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ২৫ থেকে ৩০টি বাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং লুটপাট করেছে।
এর আগে গত ২৫ জুলাই শুক্রবার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশা বলেছেন, রাত ভোটও পরে তাহাজ্জুদের সময়ে ভোট হয়ে যায়। এই ভোটগুলো করেছিলে এখানকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান (মাকসুদ হোসেন)। হঠাৎ উপজেলা নির্বাচনে এমপি সাহেব তাকে রাজাকারের ছেলে বলায় এখন জামায়াতের মত আচরন শুরু করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে তিনি জামায়াতে হয়ে গেছে। ইলেকশন করার দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে। আপনারা ভুলে যাবেন না, যারা আপনাদের তিন তিন বার ভোটাধিকার প্রয়োগ বঞ্চিত করে পুরস্কৃত হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন। রাতারাতি কেউ যদি রাজাকারের ছেলে বলায় জামায়াত হয়ে যান নাই। তিনবার ভোট প্রয়োগে নষ্ট করায় আগে মানুষের কাছে মাফ চাইতে হবে। তাই বলি ধীরে ধীরে চলুন। ৫ আগষ্টের পর জেলা যেটা হয়নি এই মুছাপুরের ৩২টা বাড়িতে আগুন দিয়েছেন। এত সাহস কোথায় পেল। এগুলো তো বিএনপি কেউ করেনি, এমনকি বৈষম্যবিরোধী জামায়াতের কেউ এমন কাজ করেনি। এখন মুছাপুর স্বাধীন, জিম্মি করার দিন শেষ হয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :