News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের ৩টি আসনে সবুজ সংকেত


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | বিশেষ প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০১:৩৫ পিএম তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের ৩টি আসনে সবুজ সংকেত

আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে যখন চারদিকে নানা ধরনের আলোচনা তখন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। ২৬ জুলাই রাতে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত ওই সভাতে উঠে এসেছে আসছে নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বিশ্লেষণ, বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সেখানে জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। রূপগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, আড়াইহাজার নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ ও সোনারগাঁও নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবে তাঁদের ‘পাল্লা ভারী’ উঠে এসেছে। এছাড়া একটি আসনে ব্যাপক রদবদলেরও বিষয়টি আলোচনা হয়।

বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে থাকা, নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে কাজ করা, মামলা ও হামলায় জর্জরিত নেতাদের দিয়েই আগামীতে সংসদ নির্বাচন করানো হবে ইঙ্গিত দেন তারেক রহমান। তিনি জানান তার কাছে বিগত সবগুলো বছরের সকল নেতাদের কর্মকান্ডের ফিরিস্তি রয়েছে। কারা মাঠে ছিল, কারা কাজ করেছে, কারা সুবিধাভোগী, কোন কোন নেতার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক আছে ইত্যাদি সকল তথ্য আছে। ৫ আগস্টের পরেও কে কি করেছে সেটাও তাঁর জানা। সুতরাং দলের প্রতি যাদের অগাধ ভালোবাসা, বিতর্কহীন কর্মকান্ড তারাই এবার প্রাধান্য পাবেন সংসদ সদস্য প্রার্থীতার ক্ষেত্রে।

বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ-৪ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে উঠে এসেছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে লড়াই করা জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি শাহ আলমকে নিয়ে। কিন্তু তারেক রহমান নিজেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন শাহ আলমের পদত্যাগের বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘শাহআলম সাহেব তো দলের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। তাকে নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নাই।’

এ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গিয়াসউদ্দিনের নাম বলা হলেও তারেক রহমান বিষয়টি এড়িয়ে যান।

ফলে জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আলোচনাতে।

বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ-১ তথা রূপগঞ্জ আসনে কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটির নেতা মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, নারায়ণগঞ্জ-২ তথা আড়াইহাজার আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও নারায়ণগঞ্জ-৩ তথা সোনারগাঁও আসনে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নানের পক্ষে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তারেক রহমানও এ তিন নেতার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে এসব নেতাদের সক্রিয়তা ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কের বিষয়টিও উঠে এসেছে। ফলে বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানিয়েছেন, তিন নেতার নাম উচ্চারণে পর তারেক রহমানে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোতে অনুমেয় তারাই পাচ্ছেন আপাতত সবুজ সংকেত।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের একটি বড় অংশ মহানগর বিএনপির আওতাধীন থাকায় সেটা নিয়ে বিস্তর কোন আলোচনা করেনি জেলা বিএনপির নেতারা। তবে আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতেও আসবে চমক।

দলের নেতারা জানান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে কার্যত সবুজ সংকেত পেয়ে গেছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব নেতারা সবচেয়ে বেশী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে ছিলেন তাদের একজন নজরুল ইসলাম আজাদ। আড়াইহাজারের আলোচিত একটি আন্দোলনের পর তাকে ধরতে প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতার খবর তখন ছিল বেশ আলোচিত। জুলাই ও আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ি স্পটকে জাগিয়ে রাখা আজাদকে ধরে তখন মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা এমন কথাও জানিয়েছেন অনুসারীরা। গত এক দশক ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জে আলোচিত। বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের পদধারী অনেক নেতা তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলনের অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নেতৃত্ব দেন। কারাভোগও করেছেন কয়েকবার। অন্তত অর্ধশত মামলার আসামী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আজাদ। দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে। কয়েকবার আজাদের বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে রাজনীতি করা মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু এলাকায় তিনি পরিচিত দিপু ভূইয়া নামে। টানা ১৫ বছর ধরে সরকার বিরোধী আন্দোলন করে রূপগঞ্জ তো বটেই নারায়ণগঞ্জকে জাগিয়ে রেখেছিলেন তিনি। রাজধানীতেও বিএনপির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে লোকজন নিয়ে শো ডাউন করে আলোচনায় ছিলেন। আন্দোলনগুলোতে ছিলেন সামনের সারিতে। বিএনপির তৃণমূল থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে তিনি সরব করে তুলেছেন। আওয়ামী লীগ থাকতে গাজী বাহিনীর একের পর এক হামলায় আক্রান্ত হন দিপুর বিভিন্ন স্থাপনা। বাড়িতে ঢুকে গুলি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আন্দোলনের আরেক নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নান এর আগে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের জনগণের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান হয়েও তিনি পরিষদে কাজ করতে পারেনি। মান্নান বিএনপির চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে তাকে মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় সংসদ। পরে তাকে অপসারণ করা হয়। গত ১৫ বছরে সবগুলো আন্দোলনেই সামনের সারিতে ছিলেন মান্নান। একের পর এক মামলায় কাবু করা হয় তাকে ও তার ছেলে যুবদলের নেতা খায়রুল ইসলাম সজীবকে। সোনারগাঁও বিএনপি'র অঙ্গ সংগঠনগুলোকে একত্র করে এক ছাতার নিচে ধরে রেখেছেন তিনি। বিগত সময় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম ও গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে মামলা-হামলায় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন তিনি। নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বাড়ীতো খোঁজখবর নিয়েছেন। বিএনপির কোন দলীয় কর্মসূচী আসলে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে নেমে পড়েন এবং আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করেন আজহারুল ইসলাম মান্নান।

Islam's Group