আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে যখন চারদিকে নানা ধরনের আলোচনা তখন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। ২৬ জুলাই রাতে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত ওই সভাতে উঠে এসেছে আসছে নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বিশ্লেষণ, বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ড। সেখানে জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। রূপগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মুস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, আড়াইহাজার নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ ও সোনারগাঁও নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাবে তাঁদের ‘পাল্লা ভারী’ উঠে এসেছে। এছাড়া একটি আসনে ব্যাপক রদবদলেরও বিষয়টি আলোচনা হয়।
জুলাই ও আগস্টে ছাত্র আন্দোলন ছাড়া গত এক দশকে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনের আলোচিত একটি ছিল আড়াইহাজারের ঘটনা। ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর অবরোধ চলাকালে সেখানকার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ছিল তখনকার সবচেয়ে আলোচিত যার নেতৃত্বে ছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। ওই সময়ে তাকে ধরতে প্রশাসনে রেড এলার্ট জারি করা হয়। এছাড়াও এর আগে আরো অনেক ঘটনাতেও তিনি ছিলেন গণমাধ্যমের শিরোনামে।
নজরুল ইসলাম আজাদ বর্তমানে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক। ছিলেন দলের সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। এক সময়ে যুবদলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
গত এক দশক ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জে আলোচিত। বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের পদধারী অনেক নেতা তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলনের অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নেতৃত্ব দেন। কারাভোগও করেছেন কয়েকবার। অন্তত অর্ধশত মামলার আসামী হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আজাদ। দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে। কয়েকবার আজাদের বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে।
২০০৩ সালে অক্টোবরের শেষে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয় বিএনপি। অবরোধের প্রথম দিন ৩১ অক্টোবর সকাল ৮ থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাচরুখী এলাকায় নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ এসে গুলি ছুড়লে শুরু হওয়া সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হয় অনেক পুলিশ সদস্য ও বিএনপি নেতারা। টনক নড়ে প্রশাসনের। ঘোষণা দেওয়া হয় যে কোন মূল্যে আজাদকে ধরতে। ওই ঘটনার পর রাজধানীর একটি হোটেল থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখি এলাকায় বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার হন নজরুল ইসলাম আজাদ। তাকে টেনে হেচড়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
এছাড়াও রাজনৈতিক মামলায় তিনি আরো কারাভোগ করেছেন।
আন্দোলনে মাঠে থাকার পুরস্কারস্বরূপ আওয়ামী লীগের হাতে বার বার আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। ২০২০ সালের ১ জুন আড়াইহাজারের ফতেহপুরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে যোগ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। এতে আজাদ, যুবদল সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি মাহমুদউল্লাহ সহ ১৫ জন আহত হয়।
এছাড়াও আজাদের বাড়িতে একাধিকবার হামলা করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। ভাঙচুর করা হয়েছে আসবাবপত্র।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে আজাদের অংশগ্রহণ নিয়ে কারো কোন প্রশ্ন নাই। আন্দোলনের পাশাপাশি তরুণ ও বিশাল একটি বিএনপির নেতাকর্মীদের তিনি নিজের কাছের করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে থাকা, নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে কাজ করা, মামলা ও হামলায় জর্জরিত নেতাদের দিয়েই আগামীতে সংসদ নির্বাচন করানো হবে ইঙ্গিত দেন তারেক রহমান। তিনি জানান তার কাছে বিগত সবগুলো বছরের সকল নেতাদের কর্মকান্ডের ফিরিস্তি রয়েছে। কারা মাঠে ছিল, কারা কাজ করেছে, কারা সুবিধাভোগী, কোন কোন নেতার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক আছে ইত্যাদি সকল তথ্য আছে। ৫ আগস্টের পরেও কে কি করেছে সেটাও তাঁর জানা। সুতরাং দলের প্রতি যাদের অগাধ ভালোবাসা, বিতর্কহীন কর্মকান্ড তারাই এবার প্রাধান্য পাবেন সংসদ সদস্য প্রার্থীতার ক্ষেত্রে।
আপনার মতামত লিখুন :