মামারা তিন ভাই মা সহ খালারা চার বোন, মামা নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এবং আইনজীবী। সেই প্রভাব খাটিয় মা ও খালাদের ওয়ারিশ সম্পত্তি জাল সনদ করে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ করেছে ওই আওয়ামী লীগ নেতা মামার বিরুদ্ধে তার ভাগিনা। মামারা শুধু জমি দখলই করেননি, রাজনৈতিক প্রভাবে আমাকে আইনি লড়াইয়েও নাজেহাল করছেন
বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগ নেতা মামার বিরুদ্ধে জাল সনদসহ নানা তথ্যের প্রমাণপত্র শাহ আল মোমেন (৩৮) নামে এই যুবক গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে এই অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোমেন জানান, ২০১২ সালে মা মোমেনা বেগমের মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় সম্পত্তি নিয়ে টানাটানি। মামারা তিন ভাই (খাজা আহসানুল্লাহ, খাজা রহমতউল্লাহ ও অ্যাডভোকেট খাজা অলিউল্লাহ মাসুদ) জোরপূর্বক দখল করে নেন পারিবারিক সম্পত্তি । মায়ের নামে থাকা নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর, নয়ামাটি এবং দেওভোগে কোটি টাকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয় মোমেন ও তার দুই ভাই একবোনকে ।
তিনি আরো বলেন, মেঝো মামা খাজা রহমতউল্লাহ ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা,অভিযুক্ত বড় মামা খাজা আহসানুল্লাহ ও খাজা অলিউল্লাহ মাসুদ সাবেক এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ"। "আর অভিযুক্ত মেজ মামা খাজা রহমতুল্লাহর স্ত্রী নাদিয়া বেগম সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার কন্যা - এই সম্পর্কের জোরেই বিগত ৫ ই আগস্ট এর আগে আমি ন্যায়বিচার পাইনি। ভেবেছিলাম ৫ আগস্ট এর পর সঠিক বিচার পাব।
আওয়ামী লীগ নেতা মামার জাল ওয়ারিশনামা তৈরির অভিযোগ তুলে বলেন, "তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর বিভা হাসানকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওয়ারিশের জাল সনদ তৈরি করেছেন এবং ওই সনদের মাধ্যমে জমি অন্যতম বিক্রি করে দিয়েছেন এই মামারা। জাল সনদের বিষয়ে আদালতে মামলা করলে আদালত সিআইডিকে তদন্ত দেয় তদন্ত সিআইডি প্রমাণ পায যে, জাল ওয়ারিশ সনদদের মাধ্যমে আমার মায়ের সম্পত্তি আত্মসাৎ করা হয়েছে। আত্মসাৎ এর প্রমাণের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নেতা মামার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ওয়ারেন্ট বের হয়। ওয়ারেন্টি ছিল অজামিনযোগ্য। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আওয়ামী নেতা মামার পক্ষে বিএনপি'র কিছু আইনজীবী দাঁড়িয়ে আদালতের বিচারকের ওপর প্রভাব বিস্তার করে জামিন মঞ্জুর করিয়ে নেয়। জামিনের দিন আমি নিজে আদালতে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষ করেছি বিচারক বলেছিলেন, এটি জামিনযোগ্য নয়, বিচারক অনেকটা বাধ্য হয়ে তাকে জামি দিয়েছিলেন। ওই সময় বিএনপি নেতা আইনজীবীরা বিচারককে আশ্বস্ত করেছিলেন যে মামার এই জাল সনদ কান্ড পারিবারিকভাবে বা সামাজিকভাবে সমঝোতা করে দেবেন। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগ নেতা মামা মুঠোফোনে খাজা অলিউল্লাহ মাসুদ আমাকে হত্যার হুমকি দেয়।
মোমেনের বলেন, "ছোট মামা অ্যাডভোকেট মাসুদ এখন আমাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা করতে চাচ্ছেন"। "সিআইডি'র এক কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে মামাদের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছেন" বলে সরব অভিযোগ করেন মোমেন।
আদালতের কার্যক্রমে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করানো হচ্ছে দাবি করে বলেন, "আমার মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে আছে"।
এই পরিস্থিতিতে শাহ আল মোমেন ও তার পরিবার প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন যা হলো ১. সিআইডি’ কর্তৃক মোমেন( আমার) বিরুদ্ধে দেয়া দাখিলকৃত তদন্ত রিপোর্টের পূর্ণাঙ্গ পুনর্বিবেচনা। ২. জাল সনদের মাধ্যমে সম্পত্তি দখল বা অন্যতো বিক্রির সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি। ৩. রাজনৈতিক প্রভাব নির্বিশেষে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। ৪.তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি জানান।
তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমি যেন আমার অধিকার পাই।" সম্পত্তি আত্মসাৎ এর এই মামলাটি এখন শুধু একটি পারিবারিক বিরোধ নয়, বরং প্রশ্ন তুলেছে আমাদের বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে। একটি পরিবারের টিকে থাকার লড়াইয়ে সত্যিই কি ন্যায়বিচার মিলবে? নাকি প্রভাবশালীদের হাতেই থেকে যাবে নিষ্পেষিত মানুষের ন্যায্য অধিকার? উত্তর খুঁজছে সাধারণ মানুষ।
আপনার মতামত লিখুন :