নারায়ণগঞ্জের বাণিজ্যিক এলাকা টানবাজার। সারাদেশে তৈরী পোশাক খাতে যেসব সুতা ব্যবহার হয় তার একটি বড় অংশ এখান থেকে যায়। তবে সুতার সাথে গত কয়েক দশক ধরে টেক্সটাইল কালার বা ক্যামিকেল মজুদ ও বিক্রি বেড়েছে টানবাজার এলাকায় যা এখন সকলের ভয়ের কারণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যারা এই এলাকাটিতে বসবাস করেন তারা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
এদিকে বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকি থাকলেও সিটি করপোরেশন, ফায়াস সার্ভিস বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে সমাধানের পথ খুঁজে পায়নি। বরং এক্ষেত্রে তাদের অবহেলা ও অনিয়ম সামনে এসেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, টানবাজারের এস এম মালেহ রোড, আর. কে মিত্র রোড, কুটিপাড়া ও বংশাল রোডের বিভিন্ন অলি গলির ভেতরের বহুতল ভবনে সুতার গোডাউনের পাশাপাশি ক্যামিকেল বা রাসায়নিকের গোডাউন ভাড়া নিয়ে চলছে মজুদ ও বিক্রি।
অধিকাংশ স্থানে দেখা যায়, রাসায়নিক ও সুতার গোডাউনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বসবাস। কোন কোন স্থানে ভবনের নিচে ক্যামিকেলের দোকান উপর বসবাস। অর্থাৎ নিচে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলের উপরের সবার পুড়ে ছাঁই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য ফায়ার সার্ভিস কোনো লাইসেন্স প্রদান করেন না। তাদের চোখে এটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ক্যামিকেল বিক্রেতারা স্থানীয় ভবনের মালিকদের অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে দোকান ও গোডাউন ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এমনকি এই এলাকায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনের ভেতরেও অনুমোদনহীন এই ব্যবসা চলছে বলে জানান তারা।
নগরীর দুইনং রেলগেট থেকে পূর্ব দিকে বাস টার্মিনাল এলাকা হয়ে হাতের ডান দিকে চলে গেছে টানবাজারের এস এম মালেহ রোড। এই রাস্তা দিয়ে একটু ভেতরে গেলেই ডান দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুটি বহুতল ভবন। এরমধ্যে একটি পদ্ম সিটি প্লাজা-১। ১০ তলা এই বাড়ির নিচ তলার প্রায় সবকটি দোকানে বিক্রি হয় ক্যামিকেল।
সরেজমিনে গিয়ে এই ভবনের দুই তলায়ও ক্যামিকেলের দোকান পাওয়া যায়। আর উপরের ফ্লোরগুলোতে প্রায় ৫০ টিরও বেশি পরিবারের বসবাস।
শাহেদ হোসাইন সিয়াম নামে এই ভবনের সপ্তম তলার এক বাসিন্দা বলেন, আমারা যখন সিটি করপোরেশন থেকে ফ্লাট নিয়েছি তখন তো জানতাম না যে নিচ তলায় রাসায়নিকের দোকান বসবে। কিন্তু পরে এটা ঠিকই হইসে। লাখ লাখ টাকার লোভে রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান বিক্রি করছে। এখন নিচে আগুন লাগলে উপরে আমরা শেষ। সারা দেশে এখন যেভাবে আগুন লাগতাছে তাতে আমরাও ভয়ে আছি।
মন্ডলপাড়া ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, আমাদের কাছে তো কোনো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই। তাই আমরা চাইলেও কঠোর হতে পারিনা। টানবাজারে যেভাবে ক্যামিকেল ব্যবসা চলছে তা সত্যিই ভয়াবহ। আমরা তাদের লাইসেন্স দেইনা। তবে সিটি করপোরেশন থেকে তারা ঠিকই ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র করিয়ে ব্যবসা করছে। এমনকি তাদের নিজেদের আবাসিক ভবনেও রাসায়নিকের দোকান আছে। এখানে তারা কিভাবে রাসায়নিকের দোকান দিলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, সিটি করপোরেশন লাইসেন্স না দিলে তো তারা ব্যবসাই করতে পারেনা। কিন্তু এটা হচ্ছে তো! আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। ঢাকা থেকে নির্দেশ আছে এ বিষয়ে তথ্য দেয়ার। কাজ শেষ হলে সম্পূর্ণ ঢাকায় পাঠাবো। তারপর তারা যা করার করবে।
এ বিষয়ে জানতে মন্ডলপাড়া ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিনকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইউ মোহাম্মদ জাকির হোসেন এ বিষয়ে বলেন, আমরা এটা নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
আপনার মতামত লিখুন :