গত বছর ৫ আগষ্টের পর নারায়ণগঞ্জ শহরের মন্ডলপাড়া ডিআইটি থেকে ২নং রেলগেইট পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। গত বছর ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমান্তকে থামিয়ে ব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া চেষ্টা করে। এ সময় সীমান্ত বাধা দিলে তিনজন ছিনতাইকারী তাকে রক্তাক্ত ফেলে ব্যাগ মোবাইল নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় যখন পুরো দেশ তোড়পাড় শুরু হয় তখন তিনজনই ছিনতাইকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন হলেও গ্রেপ্তারকৃতদের বাহিনীর সদস্য শহরে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে বলে জানা গেছে। গত মে মাস জুড়ে ছিনতাই সন্ত্রাস রোধে ডিআইটি বিভিন্ন এলাকায় লাঠি মিছিল করেছিলেন হোসিয়ারি সমিতি ও ব্যবসায়ীরা।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর হালিম জানিয়েছেন, যোগদানের পর থেকে তথ্য নিয়ে প্রতি রাতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের টহল দেয়া হচ্ছে। এরপরও বর্তমানে ছিনতাই ঘটনার কোন অভিযোগ পাইনি। এও শুনেছি, কারো মোবাইল নিয়ে গেছে কিন্তু ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিচ্ছে না। ছিনতাইকারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, শহরের ডিআইটি করিম মার্কেট, শেখ রাসেল পার্কের মসজিদের গেইট, মিন্নত আলী মাজার পয়েন্ট ও গুলশান হল সামনে ছিনতাইকারীরা কৌশলী অপরাধ করছে। রাত ৩টা থেকে ভোট ৫টা পর্যন্ত তারা সাধারণ মানুষ চলাচলে বাধাগ্রস্থ করে টাকা ও মোবাইল নিয়ে চলে যাচ্ছে। সুইচ গিয়ার দিয়ে মানুষ ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলেও, মোবাইল উদ্ধারে তাদের তৎপরতা দেখা মিলে না। আবার অনেকে ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিচ্ছে না বলে জানান।
গত বছর ছাত্র-জনতা আন্দোলনের পর সরকার পতনের নগরীর অন্যতম ব্যবসায়িক এলাকা নয়ামাটি ও করিম মার্কেট এলাকা ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত রূপ নেয়। প্রতি রাতেই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন কেউ না-কেউ। এমনকি কোন কোন রাতে বীরদর্পে ছিনতাই শেষে আনন্দ-উল্লাস করে ‘ছিনতাই পার্টি’ উদযাপন করছে দূবৃর্ত্তরা। ৫ আগষ্টে দেশে পটপরিবর্তনের পরে পুলিশের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে নয়মাটি, করিমী মার্কেট ও আশপাশ এলাকায় দলবেঁধে ছিনতাইয়ে নেমেছে কয়েকটি চক্র। রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়ছে চক্রটি। প্রতিদিন তাদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন নিরীহ পথচারী-ব্যবসায়ীরা। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে শুরুতে অনেকেই থানায় অভিযোগ করতে গিয়েও ফিরে এসেছেন হতাশা নিয়ে। আর চক্রটি এই সুযোগে মাঠে নেমেছে পুরোদমে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ব্যবসাপ্রধান এলাকা হওয়ায় এখানে মূলত ব্যবসায়ীদের আনাগোনা রয়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময় এখানে অর্থনৈতিক লেনদেন হয়। ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে নীরব-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকজন সাইকেল ব্যবসায়ী জানান, রাতে কখনো কখনো দোকান বন্ধ করতে দেরি হয়। দু’য়েকটা ঘটনা আমরাও দেখেছি। কিন্তু চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটলেও আমাদের কিছু করার নেই। ছিনতাইকারীদের হাতে সমসময় ধারালো অস্ত্র থাকে। এ কারণে দেখেও না দেখার ভান করে থাকতে হয়।
গত মে ও জুন মাসে ডিআইটি নয়ামাটি এলাকায় ছিনতাই, সন্ত্রাস ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি রোধে লাঠি-বাঁশি কর্মসূচি পারন করে হোসিয়ারি পল্লীর ব্যবসায়ীরা। নগরীর নয়ামাটি, করিম মার্কেট ও গুলশান হল এলাকায় প্রতিটি দোকানে লাঠি ও বাঁশি নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন ব্যাবসায়ীরা। এসময় বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বদু বলেন, আমরা লাঠি মিছিল করেছি। কিছু দুষ্কৃতকারী, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ মার্কেটে এসে মালিকদের কাছে জোর করে চাঁদা দাবী করে। নিরীহ কর্মচারীদের প্রতি বৃহস্পতিবারে প্রায়ই এখানে ছিনতাইয়ের শিকার হতে হয়। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ এদের এ্যারেস্ট করুন।







































আপনার মতামত লিখুন :