নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের মিনারবাড়ি টু লাঙ্গলবন্দ বাসস্ট্যান্ড সড়টির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কারের অভাবে ভাঙ্গাচুরা অবস্থায় ছিলো। ফলে এই সড়কে যাতায়াতে ওই এলাকার মানুষদের অনেকটাই দুর্ভোগ পোহাতে হতো। ৪ কিলো মিটার এই সড়কটি বিভিন্ন ছোটবড় কয়েকশত গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমে থাকায় বিভিন্ন সময় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও মিশুক দুর্ঘটনায় কবলিত হতো। এমন অবস্থায় ইউনিয়নবাসী বেশ কয়েকমাস ধরেই সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলো। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী সান উৎসব উপলক্ষ্যে সড়কটি সংস্কারের কথা উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি করা হয়নি। ফলে মিনারবাড়ি থেকে লাঙ্গলবন্দ স্ট্যান্ড পর্যন্ত যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছিলো। কিন্তু কোন প্রতিকার হচ্ছিলো না।
সব শেষ ২৮ জুলাই মো. বিল্লাল হোসেন নামের একজন বøগার যিনি দ্বিগুবাবুর বাজারে মুরগির ওজনে কম দেওয়ার চুরি ভিডিও পোস্ট করে ভাইরাল হয়ে ছিলেন। সেই বিল্লাল হোসেন এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ তুলে ধরে একটি ভিডিও পোস্ট করে। এ সময় তিনি বলেন গত ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে আমরা এই রাস্তাটির এতো খারাপ অবস্থা দেখি নাই। বর্তমানে রাস্তাটির খুবই বেহাল অবস্থা। আমি রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আমাদের ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন, বন্দর উপজেলা পরিষদের ইউএনও এবং আমাদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। যাতে করে রাস্তাটি দ্রæত সংস্কার করা হয়।
ভিডিওটি মুহূর্তেই এলাকায় ভাইরাল হলে, ২৯ জুলাই সকালেই বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এর উদ্যোগে রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। ওই সংস্কার কাজ চলাকালীন সময় ব্লগার বিল্লাল হোসেন ঘটনাস্থলে দাাঁড়িয়ে আরো একটি ভিডিও পোস্ট করেন বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এবং তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিল্লাল হোসেন জানান, আমি সকালে যখন বের হয়েছি তখন লাঙ্গলবন্দ থেকে প্রথমেই দেখেছি আমাদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের লোকজন ব্যানার নিয়ে রাস্তায় সংস্কার কাজ করছেন। আবার আমাদের ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর হোসেনকেও তার বাড়ির সামনে কাজ করতে দেখেছি।
এদিকে মুছাপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন সমর্থক গোষ্টি নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে তার বাড়ির সামনে লোকজন নিয়ে মনজুর হোসেনকে বালু ফেলতে দেখা গেছে এবং এলাকার বেশ কয়েকজন মুরুব্বিকে নিয়ে তাদের বক্তব্য সহ ফলাও ভাবে প্রচার করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা সকাল থেকেই মিনারবাড়ি টু লাঙ্গলবন্দ স্ট্যান্ড সড়কটিতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের লোকজনদের কাজ করতে দেখেছি। বিভিন্ন স্পটে তারা কাজ করেছেন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। শুনেছি আগামীকালকেও তারা সংস্কার কাজ চালিয়ে যাবে। বেশ কিছুদিন ধরে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এর সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। হয়তো সেই বিষয়টি থেকেই মনজুর হোসেন এমনটা করেছে, মাকসুদ হোসেনের সাথে পাল্লা দিতেই এমনটা করেছে হয়তো।
এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এলাকার লোকজন আমার কাছে রাস্তাটির সংস্কারের জন্য দাবি জানিয়ে ছিলো। তো রাস্তাটি আমি সোমবারই কাজ ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। লাঙ্গলবন্দের গনেশ বৈদ্য কাজটি করার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার বৃষ্টির কারণে কাজ ধরা সম্ভব হয়নি। তাই মঙ্গলবার কাজ শুরু করেছি।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর হোসেনের ভিডিওটির ব্যাপারে তিনি বলেন, মনজুর হয়তো কোনভাবে খবর পেয়েছে আমি নিজস্ব উদ্যোগে রাস্তাটির সংস্কার কাজ করাবো। তাই সে মঙ্গলবার ইট খোলা থেকে ইউএনওর দোহাই দিয়ে মাগনা ইট বালু এনে রাস্তায় ফেলেছে। আপনার মিনারবাড়ি থেকে লাঙ্গলবন্দ থেকে সরেজমিনে এসে তদন্ত করে দেখলেই পাবেন কে কাজ করাচ্ছে। আজকে ৬টি স্পটে আমার লোকজন কাজ করেছে। আগামীকালও তারা কাজ করবে।
এ ব্যাপারে মুছাপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন এর বক্তব্য জানতে তার সাথে যোগযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :