চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে থাইল্যান্ড পালিয়ে যাওয়ার পথে বিমানবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদ্য বহিষ্কৃত রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী গ্রেপ্তারের পর থেকেই বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় বইছে। একই সাথে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠনের মাত্র দুই মাসের মধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে শুরুতেই হোঁচট খেলো জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
গত ৫ আগস্টের পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রিয়াদ চৌধুরীকে বহিষ্কার করে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। তবে বিজ্ঞপ্তিতে থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু স্বাক্ষর না থাকায় তা নিয়ে সেসময় প্রশ্ন ওঠে। ফলে এতদিন স্বপদে বহাল ছিলেন রিয়াদ চৌধুরী। তবে একই কর্মকান্ডের কারণে এবার রিয়াদ চৌধুরীকে কেন্দ্রীয়ভাবে বহিষ্কার করা হয়।
গত ১৫ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ সহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এদিকে রিয়াদ চৌধুরী এহেন কর্মকান্ডের কারণে সমালোচনার মধ্যে পড়েছে বর্তমান নেতৃবৃন্দ। তারা কি করে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি জেলা বিএনপিকে স্থান দিলো এ নিয়ে বিএনপির একটি অংশ ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন। রিয়াদ চৌধুরী বহিষ্কারের পর থেকেই বিএনপির একটি গ্রুপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে একের পর এক বিষ্ফোরক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। এর আগে গত ২৪ মার্চ জেলা বিএনপির ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে সদস্য হিসেবে জায়গা পান রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী।
সম্প্রতি এক প্রোগ্রামে রিয়াদ চৌধুরীকে নিয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, তার অপকর্মের কারণে, দুর্নীতির কারণে, চাঁদাবাজি, মাস্তানির জন্য থানা বিএনপি তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিলো। তারপরও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটির গঠনকালে ওই কমিটির সদস্য হলেন তিনি। কারা তাকে সদস্য করলো? এখানে কি স্বার্থ ছিল যারা তাকে সদস্য করেছে। আজ আমরা যে লজ্জা পাচ্ছি, আজ সমালোচিত হচ্ছি তাদের কারণে। থানা বিএনপির বহিষ্কার আদেশ যে সঠিক ও দরকার ছিল তা আজ প্রমাণ হয়ে গেছে। আজ তার কর্মকান্ডের কারণে দলের সুনাম ক্ষুন্ন হলো। দল তো ক্ষতিগ্রস্ত হলো। নিজেদের স্বার্থের জন্য যখন কোনো অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, দোষী ব্যক্তিকে পদ-পদবী দেওয়া হয় এই ক্ষতি যেমন বিএনপির হয় ঠিক তেমনিভাবে জিয়া পরিবারের দুর্নাম হয়। ফতুল্লা থানা বিএনপির ভালো মানুষদের নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। খারাপদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে।
জানা যায়, গত ১৫ মে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে এদিন সকালে থাইল্যান্ড পালানোর পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে আটক করা হয়। এরপর সারাদিন তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। তার আগে গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘চাঁদা না দিলে ফ্যাক্টরি পুড়িয়ে দেওয়া হবে’ রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। ওই অডিও ক্লিপে আজাদ হোসেন নামের নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীকে চাঁদার জন্য রীতিমতো হুমকি দিতে শোনা যায় রিয়াদ চৌধুরীকে। তবে রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে আটকের পর আজাদ হোসেন মামলা করতে রাজী হয়নি। তিনি বলেন, রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। সে আমার আত্মীয়। পরবর্তীতে চাঁদাবাজীর ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় এস আই শামীম হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় রিয়াদকে এক নাম্বার আসামী করা হয়। সেই সাথে সন্ধ্যায় তাকে ডিবি অফিস থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে পাঠানো হয়। শনিবার শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :