নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে (সাবেক ইউরোপিয়ান ক্লাব) হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শামীম ওসমান-সেলিম ওসমানসহ ১৯৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১৪ মে বুধবার দিবাগত রাতে ক্লাবের সুপারভাইজার অঞ্জন কুমার রায় বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। শুক্রবার (১৬ মে) রাতে মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট এ ঘটনা ঘটে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপরাধ) তারেক আল মেহেদী।
মামলায় শামীম ওসমানের শ্যালক ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি তানভীর টিটু, খবির আহমেদ, আসিফ হাসান মাহমুদ মানু, শাহ নিজাম, শামীম ওসামনের বেয়াই ফয়েজ উদ্দিন লাভলু, আরমান হোসেন জুয়েল, সাবেক সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, জাকিরুল আলম হেলাল, সাজনু, চন্দন শীল , জালাল উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, হাসান ফেরদৌস জুয়েল, লিটন সাহা, বিপ্লব সাহা রামু, এসএম রানা, সানাউল্লাহ, এএম মোস্তফা কামাল, কামরুল হাসান মুন্না, এম মাসুদ উর রউফ, মিজানুর রহমান মিজান, শংকর কুমার রায়, ফাইজুল ইসলাম, মহসিন মিয়া, মীর সোহেল, ওয়াজেদ আলী খোকন, জসিম উদ্দিন, আবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আদনান কবির, কবির হোসেন, ডিশ বাবু, রিয়ন, মিনহাজ ওরফে ভিকি, আব্দুল জাব্বার, বাপ্পি, এহসানুল নিপু, অনুপ কুমার সাহা, আব্দুল কাদির, দেবদাস সাহা, সোহাগ রনির নাম উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী অঞ্জন কুমার রায় উল্লেখ করেন, আসামীরা ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল সময়ের মধ্যে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের প্রভাব খাটিয়ে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা হয়ে রাম রাজত্ব কায়েম করা শুরু করে। ক্লাবে তাদের দ্বারা সংঘটিত সকল প্রকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অর্থ ইত্যাদি অপকর্ম করে কোটি কোটি টাকা তহবিল তছরূপ করে ক্লাবকে শূন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। ওই সকল বিষয় যাতে প্রকাশ না হয় সেজন্য গত বছরের ২ আগস্ট সন্ধ্যায় ক্লাবের গেস্ট হাউসের প্রেসিডেন্ট স্যুটে গোপন শলা পরামর্শ করেন। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১নং আসামি থেকে ৩নং আসামিদের প্রত্যক্ষ হুকুম ও নির্দেশে মামলায় উল্লেখিত আসামিরা গত ৫ আগস্ট রাত ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জে ক্লাবে ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও ৮/১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ক্লাবের লুটপাট ও ভাংচুর ও বিস্ফোরকদ্রব্য দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। শামীম ওসমান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মামলার অপরাপর সকল আসামিরা তাদের অপকর্মের দোসর হিসেবে ঘটনাস্থলে থেকে ক্লাবের যাবতীয় গোপন তথ্য ও আলামত নষ্ট করতে অগ্নিসংযোগ করে ক্ষতিসাধন করে। এসময় ক্লাবের অফিসে থাকা নগদ ৬ লাখ টাকা লুট হয়। তাদের অগ্নিকান্ডে ক্লাবের নামাজঘরও রক্ষা পায়নি। এক পর্যায়ে তারা গেস্ট হাউস, লাইব্রেরিসহ, চেক বই, এসি, টিভি, প্রিন্টার মেশিন, ল্যাপটপ, হার্ড ডিস্ক ও মনিটরসহ সিসি ক্যামেরা, ডিপ ফ্রিজ, পানির মটর, আইপিএস সেট, সাউন্ড সিস্টেমসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মালামাল বিষ্ফোরক দ্রব্য দ্বারা আগুন লাগিয়ে ভষ্মিভূত করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়। এ ঘটনায় ২নং আসামি শামীম ওসমান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :