চাঁদাবাজির ঘটনায় ফের আলোচনায় এসেছেন সাত খুন মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের একান্ত অনুসারী ও বর্তমান জেলা তরুণ দলের সভাপতি টিএইচ তোফা। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী তরুণদলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
৫ মে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী তরুণ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. মো. আবু বকর সিদ্দিকের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এতে বলা হয়, টিএইচ তোফার বিরুদ্ধে আনিত চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারণার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়ায় এ বিষয়ে সঠিক তথ্য উদঘাটন করা এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলামকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় দপ্তরে পেশ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা গেল। তদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান খোকা এবং একে আল রিয়াদ।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে একটি মার্কেটের নির্মাণাধীন কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে টিএইচ তোফার বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দুজন ব্যক্তিকে তরুণদল নেতা তোফাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, আপনি গিয়াসউদ্দিন স্যারের নাম বলে চাঁদা চাচ্ছেন। আমি গিয়াসউদ্দিন স্যারকে ফোন দিতেছি। অযথা লোকটার নাম বিক্রি করে বদনাম করছেন। লোকটায় (গিয়াসউদ্দিন) এসবের ভেতর থাকে না। ভিডিওটির ঘটনাস্থল (নাসিক) ১ নং ওয়ার্ডের মসজিদ গলি এলাকার শেষের দিকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লন্ডন প্রবাসী অধ্যাপক সেলিম মিয়ার মালিকানা জমিতে মার্কেটের কাজ চলমান রয়েছে। জমি মালিকের অবর্তমানে জিহাদ-হামজা নামের দুই ব্যক্তি নির্মাণাধীন কাজের দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে। গত ৪ মে বিকেলে তরুণ দল নেতা টিএইচ তোফা কাজ বন্ধের জন্যে হুমকি প্রদান করে।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে থাকা নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের জানান, আমার ছোট ভাইরা লন্ডন প্রবাসী সেলিম সাহেবের মার্কেটের কাজ দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে। বিকেলে দেখলাম হঠাৎ টিএইচ তোফা কাজ বন্ধের জন্য হুমকি দিচ্ছিলো। তিনি এসেই প্রথমে বলেছে গিয়াসউদ্দিন সাহেব কাজ বন্ধ করতে বলেছে। তখন আমি গিয়াসউদ্দিন সাহেবকে বিষয়টি জানানোর জন্য ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু তিনি রিসিভ করেনি। আমরা যতটুকু জেনেছি গিয়াস সাহেব তোফাকে পাঠায়নি। উনার নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আমার ম্যানেজারকে তোফার লোকজন জোর করে উঠিয়ে নিয়ে তার পক্ষে স্বীকারোক্তি নেন। কিন্তু তোফা পুরো হীরাঝিল এলাকার মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তিনি গত ৫ই আগস্টের পর কি পরিমান চাঁদাবাজি করেছেন তা এলাকার মানুষ ভালো করেই অবগত আছেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা তরুণ দলের সভাপতি টিএইচ তোফা বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে, যারা আমার ভিডিও করেছিল তারা স্বীকার করেছে যে তারা অন্যদের রাস্তা বন্ধ করে শীট বসাচ্ছিল। তদন্ত হোক। তদন্তেই সত্য বেরিয়ে আসবে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এলাকায় থাকা অবস্থায় নূর হোসেনের সঙ্গে গভীর সখ্যতা ছিল তাঁর। একটি টিউবওয়েল স্থাপনের প্রায় দেড় লাখ টাকা অনুদান আনার পর থেকেই সম্পর্কটা গাঢ়ো হয়। বছরের পরিক্রমায় সেই তোফা এখন নূর হোসেনের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত গিয়াসউদ্দিনের উপর ভর করেছেন। তাঁর নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নস্থানে শুরু করেছেন চাঁদাবাজী। সাত খুনের ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা তরুণ দলের সভাপতি টিএইচ তোফা নূর হোসেনের সাথে আর্থিক লেনদনের বিষয়টি অস্বীকার করলেও বিভিন্ন বিচার শালিস ও এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারে নূর হোসেনের অফিসে তার যাতায়াত ছিল বলে সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছিলেন। এমনকি নূর হোসেনের কাছ থেকে একটি গভীর নলকুপ ও এলাকা একটি মসজিদ ও মাদরাসার উন্নয়নের ব্যাপারে তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আনার কথাও তিনি তখন স্বীকার করেছেন। তবে তিনি কোথায় মসজিদ মাদরাসার উন্নয়নে ব্যয় করেছেন তা বলতে পারেননি তখন।
হীরাঝিল এলাকাবাসী জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে টিএইচ তোফা তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে চিটাগাংরোড, হিরাঝিল, ডিএনডি খালের পাশে দোকানদারের হয়রানি করে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছেন। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, শিমরাইল মোড় ফুটপাতে টিএইচ তোফার ৫০ টি দোকান রয়েছে। প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে মোট ১৫ হাজার চাঁদা তুলছে। হিরাঝিলে বাড়িঘর নির্মাণকালে টিএইচ তোফাকে চাঁদা না দিলে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে গতকাল হীরাঝিলে প্রবাসী সেলিমের কাঁচা বাজারের শেড নির্মাণ কাজে বাধা দিতে চাইলে এলাকার ছাত্র জনতা টিএইচ তোফার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জনগণের প্রতিবাদের মুখে টিএইচ তোফা দলবল নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবাসী অধ্যাপক সেলিম বলেন, টিএইচ তোফা আমার কাঁচাবাজারে নির্মাণ কাজে বাধা দিলে আমার নিযুক্ত লোকজন প্রতিবাদ করলে টিএইচ তোফা তাদের হুমকি দিয়ে যায়। সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল আবাসিক এলাকা বাণিজ্য নগর পরিণত হয়েছে। কিন্তু টিএইচ তোফার চাঁদাবাজিতে আতঙ্কে দিন কাটছে হিরাঝিলবাসীর।
আপনার মতামত লিখুন :