আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে তা এখনো ঘোষণা না করে হলেও বিভিন্ন আসনে এরই মধ্যে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাওয়া শুরু করেছেন। আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন হবে সেই লক্ষ্য রেখে অধিকাংশ এমপি প্রার্থীরা জনসংযোগ চালাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জেও একইভাবে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে এমপি প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের। এরই মধ্যে তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ (সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা) ও নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ) আসনে বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এর ফলে অন্যান্য বিএনপির নেতাকর্মীদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তবে তিনি কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন তা স্পষ্টভাবে না বললেও বিভিন্ন সক্রিয়তার মাধ্যমে তা স্পষ্ট করছেন। ঈদের আগে থেকেই বসে নেই তিনি। সোনারগাঁয়ের পাশাপাশি সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা এলাকায় এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন তিনি।
এর আগে গিয়াসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ১৭ জুন দীর্ঘ ১৪ বছর পর জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যে সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন। এই সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে জেলা বিএনপির আহবায়ক থাকা অবস্থায় তিনি পুরো জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজান। বিএনপিকে আগের তুলনায় করেন আরও সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী। তার বিভিন্ন কর্মকান্ডে জেলা বিএনপি নতুন করে জেগে উঠে। এর ফলে শামীম ওসমানের প্রধান টার্গেটে পরিণত হোন গিয়াস উদ্দিন। শামীম ওসমানের এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই যেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি গিয়াসের সমালোচনা করেন নি। তাকে নিয়ে শামীম ওসমানের অতিকথনে গিয়াস উদ্দিন বারবার খবরের শিরোনাম হন।
এদিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে জেলা জুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্ধ শুরু হলে নেতাকর্মীদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে প্রশংসায় ভেসেছিলেন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। প্রতিনিয়ত তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানা দিক নির্দেশামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার বক্তব্য শুনে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের তুলনায় প্রতিনিয়ত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়েছিল। এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হলে তা শক্ত হাতে দমন করেন তিনি। পাশাপাশি জেলার আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে প্রশাসনকে সব ধরণের সহযোগিতা করেন। সেই সঙ্গে তার নির্দেশনায় ৫ আগস্ট থেকেই জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহারা দিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। এর আগে জেলা বিএনপির কমিটি হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী শামীম ওসমানের মাথাব্যাথা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় গিয়াস উদ্দিন। কারণ ২০০১ সালে তাকে হারিয়েই মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। পাশাপাশি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এক কর্মসূচি সফলভাবে পালন করেন গিয়াসের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে ঢেলে সাজাতে থাকেন তিনি। কিন্তু সাহসী নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাকে পথে পথে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দায়ের হয় অসংখ্য মামলা। ২০২৩ সালে ও ২০২৪ সালে বছরব্যাপী নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছিল। বছরের পুরোটা সময় গিয়াসের সমালোচনায় মুখর ছিলেন একেএম শামীম ওসমান। জেলা বিএনপির আহবায়ক থাকা অবস্থায় তিনি পুরো জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজান। বিএনপিকে আগের তুলনায় করেন আরও সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী। তার বিভিন্ন কর্মকান্ডে জেলা বিএনপি নতুন করে জেগে উঠে। গত ২৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তি করা হলেও এখনো নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছেন তিনি। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে রাজপথ সরগরম রেখেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :