নারায়ণগঞ্জের বন্দরে গত দশ মাসে রাজনৈতিক পর্টপরিবর্তনে বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটেছে রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারের কারণে, আবার কিছু ঘটনা পারিবারিক কলহ বা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঘটেছে। রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্যের লড়াইয়ে হাফেজীবাগে প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পরপর দুজন নিহত হন। এই ঘটনায় বিএনপির সাবেক কাউন্সিলরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বন্দর এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করেও সংঘাতের ঘটনা ঘটছে, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এদিকে রাজনৈতিক কোন্দলের সুবাদে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতাকে ইতোমধ্যে পিটুিন ঘটনায় বন্দর জুড়ে সমালোচনা রয়েছে। অন্যদিকে বন্দর থেকে শহরে লক্ষাধিক পারাপারকারী যাত্রীদের প্রধান সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে টোল আদায় নিয়ে নতুন করে বিএনপি নেতারা বির্তকির্তে জড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে বিএনপি প্রতিটি নেতা-কর্মীকে উদ্দেশ্যে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের স্বার্থবিরোধী বিষয়ে কোনো ছাড় নয়।
জানা যায়, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হয়। এতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি বিহীন বন্দর উপজেলা একক ক্ষমতায় ছড়িয়ে পড়ে বিএনপি নেতারা। এর এক মাস পর ৬ সেপ্টেম্বর বন্দর নবীগঞ্জে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের হাতে পিটুনি শিকার হন মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। এ ঘটনায় প্রতিপক্ষ দলের নেতা যুগ্ম আহবায়ক আবু কাউসার আশা ও বহিস্কৃত আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন আহত টিপু। এতে বন্দর জুড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও বড় সংর্ঘষে লিপ্ত হয়নি। এর কয়েকদিন পর গত বছর ২৭ অক্টোবর আদালতপাড়ায় মদনপুর ইউনিয়নের শিল্পপতি সুরুজ মিয়ার সহযোগী কাবিল বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ। এ সময় সেই গ্রুপের এলোপাথাড়ি কিল ঘুঁষি ও লাথি মারলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
এদিকে টিপু-আশা ও মুকুল নিয়ে যখন বন্দর উত্তেজনা পরিবেশ হয় তখনই আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠন তৎপরতা দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন করতে তাদেরকে লিফলেট বিতরণ ও অন্তবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বন্দর উপজেলাতেও হিরণের লাঞ্ছিত ঘটনায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হয়ে পড়েন।
নয় মাসের ব্যবধানে গত ২৯ জুন নিজ দলের প্রতিপক্ষ হাতে দিগম্বর হয়ে পিটুনি শিকার হয়েছে বহিস্কৃত বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি আওয়ামীলীগের নেতার টেন্ডারে বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখলে যান বলে অভিযোগ উঠে। এর দুইদিন পর তার সমর্থকরা মদনপুরে সড়ক অবরোধ করে ঘন্টাব্যাপী হাজার হাজার যাত্রীদের চরম দূর্ভোগে ফেলে সমালোচিত হন।
এর আগে ২১ জুন বন্দর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এতে আলাদা দুটি হত্যা মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সাবেক বর্তমানকে আসামী করা হয়েছে। মামলা দুটিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক দুই কাউন্সিলর ও বহিস্কৃত নেতা হান্নান সরকার সহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা গেছে, বন্দর রেললাইন, হাফেজীবাগ ও সালেহনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার ও বাবু শিকদারের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশার পক্ষের জাফর-রনিদের দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত ১ জুলাই থেকে শহর আসা যাওয়া বন্দরবাসী খেয়াঘাট হলো সেন্ট্রাল ঘাট। এই ঘাট বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে এমপি সেলিম ওসমান নিজ দায়িত্বে পালন করতেন। বন্দরবাসী পারাপারে তিনি ২টাকা টোলে বিনাখরচে ট্রলার দিয়ে লাখ লাখ মানুষ কর্মজীবন অতিবাহিত করতেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার যাবার দশ মাসেই উল্টো হয়ে যায় বিএনপি নেতা দিদার খন্দকারের বদৌলতে। জাকির খানের নাম ভেঙ্গে তিনি নৌকা ঘাটেও ২টাকা করে টোল আদায় করছেন। বিগত সময়ে যেভাবে টোল নেয়া হত সেভাবে এখনো নেয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর কারণে বন্দরবাসী সাথে প্রতিনিয়ত টোল আদায়কারীদের সাথে বাকবিতন্ডতা সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার মূল্যে সেন্ট্রাল খেয়াঘাটটি ২ কোটি ৬ লাখ ১ হাজার টাকায় ইজারা নেন বিএনপি নেতা দিদার খন্দকার। তার প্রতিপক্ষ যুবদল নেতা রাফিউদ্দিন রিয়াদ টেন্ডারে ২ কোটি ৫ লাখ টাকা দরপত্র জমা দেন। যার ফলে মূল টাকা প্রায় ৫৬ লাখ ১ টাকা বেশি দরপত্রে নেয়ার কারণে বন্দরবাসী এখন গলা কাটা হয়ে পড়েছে টোল। বিএনপি-যুবদল নেতার খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে এত টাকা দরপত্র প্রতিযোগিতার কারণে আগামী এক বছর বন্দরবাসী দূর্ভোগে শিকার হবেন। যার কারণে ইতোমধ্যে বিএনপি নেতাদের এমন কান্ডে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :