আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আগাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোন মিছিল, সমাবেশের দিকে মনোযোগ না দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ দূর করার দিকে বেশি মনোনিবেশ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে থাকা ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে তা সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন। সবশেষ ঈদের আগে তারা লালপুরবাসীর কথা চিন্তা করে সেখানে বিনামূল্যে ভ্যানগাড়ি সার্ভিস চালু করেন। এর কিছুদিন পরই সদর উপজেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে ঈদের আগে একটি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করান। এর আগে ফতুল্লাকে নিয়ে সবাই মাইকে বড় বড় কথা বললেও তারা তা বাস্তবে করার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে ফতুল্লা বাদেও নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য উপজেলাগুলোতে যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত তারা স্থানীয় প্রশাসনের দরজায় ঘুরছেন। করছেন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও। এভাবে তারা স্থানীয় ভোটারদের মন জয় করে নিচ্ছেন। পাশাপাশি জামায়াতের এমন কার্যক্রমকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সবাই।
এর আগে থেকেই জামায়াতের নেতাকর্মীরা বেশ কৌশলে নিজেদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছেন। কারোর মাধ্যমে যেনো ভাবমূূর্তি নষ্ট হয় সেদিকে জামায়াতের নেতারা বেশ সজাগ রয়েছেন। তারা মাঠের জনপ্রিয়তা বাড়ার জন্য একের পর এক সুশৃঙ্খল কর্মসূচি পালন করে আসছেন। নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীরা বলছেন, প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে যোগ্য এবং নির্বাচনী মাঠে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তত। পাঁচটি আসনে নির্বাচনে সবগুলোতে জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম।
তার আগে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৬বছরের শাসনামলে রাজনীতি থেকে মাইনাস ছিল জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তাদেরকে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে রাজনীতি করতে সব ধরণের বাধা প্রদান করে ক্ষমতাসীনরা। তবে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুরোদমে রাজনীতি করতে পারছেন। গত ৫ই আগস্টের পর থেকে তারা নিজেদের সক্ষমতার জানান দিচ্ছেন। একই সঙ্গে শৃঙ্খলার সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে মানুষের মনে জায়গা করে নিচ্ছেন। এর ফলে সারাদেশের মতোন নারায়ণগঞ্জেও এরই মধ্যে ভালো একটি ভোটব্যাংক তৈরি হয়েছে জামায়াতের। একদিকে তারা যেমনিভাবে সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন আরেকদিকে তারা কৌশলে নির্বাচনের মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন। যেকোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে তারা বড় একটি অংশ জয়লাভ করতে মরিয়া। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন আসনগুলোতে আগামী দিনের এমপি প্রার্থীরা নিজেদের ঝালাই করে নিচ্ছেন।
চলতি রমজান মাসে তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ইফতার মাহফিল করে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। এর ফলে আগামীতে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভালো অবস্থানে থাকবে এবং তাদের সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে এখনো তাদের কিছুটা দূর্বলতা থাকলেও তারা খুব শিগগিরই তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন। এদিকে, এরই মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় জামায়াত। নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এতো আগেই প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের মাঠে জামায়াতের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। স্ব স্ব প্রার্থীরাও কৌশলে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :