News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

আওয়ামী লীগ পলায়নে এগারো মাস, গ্রেপ্তার আতঙ্ক


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম আওয়ামী লীগ পলায়নে এগারো মাস, গ্রেপ্তার আতঙ্ক

শেখ হাসিনা সরকার পতনের এগারো মাস পূর্তি দুইদিন আগে দুই থানায় পাচঁটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ছাত্র-জনতা ও একটি শিশু হত্যাকান্ডের ঘটনায় দীর্ঘ সময়ে পর মামলা দায়ের করেছেন নিহত স্বজনরা ও পুলিশের এক এস আই। গত বছর ৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়ায় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মহড়া দিলেও ছাত্র-জনতা ধাওয়া পালিয়ে যায়। ওই সময়ে দুইজন নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মাঠ ছাড়েন গত বছর ৩ আগস্ট। ওই দিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর হাই ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন পৃর্থক ছাত্র-জনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলেন। এরপর ছাত্র-জনতা পাল্টা মিছিলের আতংকে মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের জেলা-মহানগরের পদধারী নেতারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে হত্যার অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা সিদ্দিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা হয়েছে। গত মাসে ২৭ ও ৩০ জুন চারজন বাদি চারটি মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য এ.কে.এম শামীম ওসমান, শামীম ওসমানপুত্র অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও নাসিক ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল (৪২)। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরে গুলিতে রিয়া গোপ নামের ৭ বছরের শিশুর মৃত্যুর প্রায় ১১ মাস পর মামলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এস আই আবু রায়হান বাদী হয়ে ১ জুলাই মামলাটি দায়ের করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, ১৯ জুলাই সাড়ে ৪টায় আওয়ামী লীগের দেড় শ হতে ২০০ জন অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতিকারী আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত হয়ে মিছিলকারীদের উপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। ৬টা ২০ মিনিটে গুলশান হলের পেছনে ২৭ নয়ামাটি এলাকার দীপক কুমারের ৫ তলা বাড়ির ছাদে রিয়া গোপ ৭ খেলাধুলা করার সময়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। তাকে প্রথমে ভিক্টোরিয়া ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ২৪ জুলাই মারা যান। রিয়া গোপের পরিবার বাদী হয়ে মামলা করবেন জানানোর পরে তারা করেনি। এ কারণেই পুলিশ মামলাটি দায়ের করে। এদিকে মামলা না করা প্রসঙ্গে রিয়ার মা বিউটি ঘোষ বলেন, ‘মামলা করে কী হবে? কাদের নামে মামলা করবো? হত্যাকারী কে, আমরা জানি না। আমরা বিচার ছেড়ে দিয়েছি সৃষ্টিকর্তার উপর।

রিয়ার মৃত্যু দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। অথচ আজও দায় স্বীকার করেনি কেউ। মামলাও হয়নি। ঘটনার দিন ছিল শুক্রবার, ১৯ জুলাই। জুমার নামাজের পর শহরের রাস্তায় ছিল না কোনো পুলিশি উপস্থিতি। এই ফাঁকেই মাঠে নামেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শত শত নেতাকর্মী, হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র। সেদিন শহরের ডিআইটি এলাকা থেকে নয়ামাটির দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে অগ্রসর হন তারা। পুলিশের অনুপস্থিতিতে বিরোধীদের প্রতিরোধ করতে নেমে পড়ে এই দল। ধারণা করা হয়, সেদিন তাদের গুলিতেই রিয়ার মৃত্যু হয়। পরে বিকেলে যখন গুলি শেষ হয়ে আসে, তখন সরে যান শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা।   

এদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এগারো মাস ধরে নারায়ণগঞ্জে নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। কেউ দেশে-কেউ বিদেশে মাটিতে পলাতক জীবন কাটিয়েছেন। এদের মধ্যে বিগত ১৬ বছর ক্ষমতা থাকাকালে দাবড়িয়ে বেড়ানো নেতাদের সংখ্যা বেশি। সাবেক মন্ত্রী গাজী, নাসিক সাবেক মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে, অনেকে জামিনে বের হয়ে পালিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগেই নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর ও উপজেলা থানা বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা-ঢাকা দেন। ছাত্র-জনতা হতাহত শতাধিক মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন কর্মীরাও। তবে এসব নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে সরব রয়েছেন। 

জানা যায়, জেলা মহানগরের আওতাধীন থানা-উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর একচ্ছত্র দাপটে গত পনেরো বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠেই দাঁড়াতে পারেননি। বিচ্ছিন্ন কিছু দলীয় কর্মসূচি ছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে সরব ছিল বিএনপি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছে বিএনপি। শুরুতেই গা-ঢাকা দেন জেলা মহানগর ও থানা উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তৃণমূলের অনেকেই এত দিন নিজ নিজ বাড়িতে ছিলেন। এসব কর্মীও এখন মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর একাংশ ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে সরব রয়েছেন।

হত্যা, নাশকতাসহ একাধিক মামলা দায়েরের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা আছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত শেখ হাসিনার পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। মোবাইল ফোন ও সামাজিক মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তাদের সাথে পাচঁটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও অধিকাংশ স্থানীয় ইউপি সদস্য আত্মগোপনে রয়েছেন। আড়াইহাজার ও বন্দরে কয়েকজন চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও জামিনে গা-ঢাকা দিয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী দেশের বাইরে আত্মগোপনে চলে গেছেন। শুধু মূল দল নয়, আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও লাপাত্তা। যারা এলাকায় অবস্থান করছেন, তারাও ‘অজ্ঞাতপরিচয় আসামি’ আতঙ্কে রয়েছেন। যে কাউকে যে কোনো সময় আটক করে যে কোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।  

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা ঘরছাড়া। তারা নিজেদের গোপন রাখার চেষ্টা করছেন। তবে পরিবার-পরিজনরা দিনরাত আতঙ্কের মধ্যে থাকছেন। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা জেলা মহানগরের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে। 

নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, নিজের ঘরে থাকতে পারছেন না। একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। তিনি কাউকে কোনো দিন একটি খারাপ কথাও বলেননি। এখন তাঁর নামে হত্যা মামলা হচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা বেশি ভয়ে আছেন। কখন তাদেরও মামলায় জড়ানো হয়। দিন-রাত টেনশনে থাকতে হচ্ছে। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা জানিয়েছেন, হত্যা মামলাগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও স্থানীয় ও জেলার সাবেক সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম আছে, তারা জেনেবুঝেই আত্মগোপনে গেছেন।

Islam's Group