আমার স্বামীকে তারা মেরে ফেলেছে। ঘটনার সময়ে আমার ছেলে থাকলে তাকেও তারা মেরে ফেলতো। তারা আমার স্বামীকে মেরে এখন ঘটনা অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা পরিবার নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছি। তারা অনেক ক্ষমতাশালী। যে কোনো সময় আমাদের উপর হামলাও করতে পারে। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের নিহত জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগম। অভাবের সংসারে স্বামী হারানোর শোকে তিনি কাত হয়ে পড়েছেন। কান্না করতে করতে এখন আর তার চোখে পানি আসে না।
গত ৩০ জুলাই বিএনপির কার্যালয়ের ভাড়া চাওয়ায় জাহাঙ্গীর হোসেনকে বিএনপির নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় পর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদিও পুলিশ প্রশাসন বলছে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পুলিশ প্রশাসন তাদের পাশে রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার প্রায় তিনদিন পেরিয়ে গেলেও আড়াইহাজারের মাহমুদপুর ইউনিয়নের সালমদী নয়াবাজার এলাকায় ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানপাট খুলেনি। ঘটনার পর থেকেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সেই সাথে এই ঘটনা নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা কললে নিরব ভূমিকা পালন করছেন। জানেন না দেখেননি বলে উত্তর দিচ্ছেন।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
জাহাঙ্গীরের বড় ছেলে মো. রাসেল বলেন, তারা গত ১০ মাস ধরে দোকান ভাড়া নিয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা এক টাকাও ভাড়া দেয়নি। তাই তাদেরকে গত তিন মাস ধরে দোকান ছেড়ে দিতে বলে আসছিলাম। কিন্তু তোতা মেম্বার ভাড়াও দিচ্ছিলো না আবার দোকানও ছাড়ছিলো না। ঘটনার দিন আমি আর আমার বাবা দোকানে কাজ করাইতেছিলাম। বাবাকে দোকানে রেখে আমি কাজে চলে যাই।
কিছুক্ষণ পর শুনি তোতা মিয়া সহ তার লোকজন মিলে আমার আব্বাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার বাবা আর নেই। আমি বাবার সাথে থাকলে তারাও আমাকে মেরে ফেলতো। হাসপাতালে গিয়ে শুনেছি হাসপাতালেও নিয়েও তারা আমার বাবার মৃত দেহের উপড় আঘাত করেছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মামলা দায়ের গ্রেফতার-১
এই ঘটনায় নিহত জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে আড়াইহাজর মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামিরা করা হয়েছে, তোতা প্রধান ওরফে তোতা মেম্বার (৭০), বেনু প্রধান (৭৫), আলম প্রধান (৪৫), রাসেল প্রধান (৩৫), খোকন প্রধান (৪০), সাদ্দাম (৩৫), জাহাঙ্গীর প্রধান (৪০), হানিফা (৪৫) ও হাসেম (৪৫)। তাদের মধ্যে হাসেমকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, তাদেরকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ সহ সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান করা হয়েছে।
এদিকে নিহতের মেঝো মেয়ে নিলুফা আক্তার বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। ঘটনার পর বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। আমাদেরকে কেউ শান্তনা পর্যন্ত দিতে আসেনি। অথচ আমার বাবাও বিএনপির মিছিল মিটিংয়ে যেতো।
নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গার হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় নয়জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আট থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সেই সাথে এই মামলায় ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলমান রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের আতঙ্ক হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি।
আপনার মতামত লিখুন :