News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শৃঙ্খলা ভাঙ্গছে বিএনপি নেতারা


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ১১:১৯ পিএম শৃঙ্খলা ভাঙ্গছে বিএনপি নেতারা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নারায়ণগঞ্জে বিএনপির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করছে। চারটি আসনে মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলেরই মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা। কোথাও এক মঞ্চে উঠে মনোনয়ন বাতিলের দাবি, কোথাও মশাল মিছিল, আবার কোথাও সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহ সব মিলিয়ে দলের ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মনোনীত প্রার্থীরা যেমন বিপাকে পড়ছেন, তেমনি সুযোগ নিচ্ছেন বহিরাগত খেলোয়াড়রাও। নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে বিএনপির এই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নির্বাচনের মাঠকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।

২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণার অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে বিএনপি মনোনয়ন দেয়। কিন্তু মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই তিনটি আসনে দলের ভেতরেই তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়। মনোনীত প্রার্থীদের মেনে নিতে না পেরে অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন থেকে শুরু করে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত করছেন। এতে ভেঙে পড়ছে দলের শৃঙ্খলা; ক্ষুণ্ন হচ্ছে বিএনপির সামগ্রিক ভাবমূর্তি।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে নিজের দলে টেনে নিতে সক্ষম হলেও আড়ালে অসন্তোষ রয়ে গেছে। যদিও এই আসনে প্রকাশ্য বিদ্রোহ নেই, তবে রাজনৈতিক মাঠ পুরোপুরি স্থিতিশীলও নয়।

সবচেয়ে আলোচিত বিরোধ দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান, কিন্তু সাড়া মেলেনি প্রতিদ্বন্দ্বী তিন নেতার। বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সাবেক সাংসদ আতাউর রহমান আঙ্গুর, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার। দীর্ঘদিন বিভক্ত থাকা এই তিন নেতা এবার একত্র হয়ে আজাদের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে এক মঞ্চে উঠেন। গত ১০ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে তারা কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। গত ১৮ নভেম্বর সুমনের অনুসারীরা মশাল মিছিল বের করেন আজাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে। অন্যদিকে আজাদের অনুসারীরাও পাল্টা শোডাউন করে জানান দিয়েছেন তাদের শক্তির উপস্থিতি। যে আসনে বিএনপির দীর্ঘদিনের বিভাজন এখন এক হওয়ায় আজাদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মডেল গ্রুপের মালিক ও সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া মাসুদুজ্জামান মাসুদ। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ওসমান পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে। যদিও তিনি দু’দিন ধরে সাবেক এমপি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ খান টিপুসহ শীর্ষ নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে সমর্থন আদায় করেন, তবুও বিরোধ পুরোপুরি থামেনি। গত ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে মনোনয়নবঞ্চিতরা। এখানে মাসুদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি করেন সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু,  প্রাইম গ্রুপ চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা। এর ফলে মাসুদের নির্বাচনী পথ আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনেও নতুন সংকট দেখা দেয়। এখানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মনোনীত প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান একটি অডিও সাক্ষাৎকারে দলীয় নেতাকর্মীদের ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দেন বলে অভিযোগ ওঠে। অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। গত ১৮ নভেম্বর নেতাকর্মীরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিলের আয়োজন করে মান্নানের প্রার্থিতা বাতিল এবং তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। নেতারা বলেন, মান্নানের বিতর্কিত বক্তব্যে দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে, তাই তাকে বাদ দিয়ে যোগ্য ও সুশিক্ষিত কাউকে মনোনয়ন দিতে হবে।

নারায়ণগঞ্জের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তা শুধু স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই বরং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপরও চাপ বাড়াচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে প্রকাশ্য বিরোধ, সংবাদ সম্মেলন, মশাল মিছিল ও মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের অস্থিরতা বিএনপির জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করছে।

Islam's Group