News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

নারায়ণগঞ্জ শহরের দক্ষিণাঞ্চলের গডফাদার


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ১১:৪০ এএম নারায়ণগঞ্জ শহরের দক্ষিণাঞ্চলের গডফাদার

মন্ডলপাড়া ও জিমখানায় অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়ে চাঁদাবাজী, এলাকাতে মাদক ব্যবসা সহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এম এ মজিদ ও তার ভাই বিএনপি নেতা হাসান আহমেদ। গেল দেড় দশক ধরে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও নারায়ণগঞ্জ শহরের দক্ষিণাংশের ত্রাস হিসেবে পরিচিতি পায় বিএনপির ২ সহোদর। ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ অটোরিকশার (ইজিবাইক) অবৈধ স্ট্যান্ড বানিয়ে হাজার হাজার যাত্রীকে জিম্মি করে চাঁদা তুলতো তারা। এছাড়াও আশেপাশের এলাকায় তারা গড়ে তুলেছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। বিগত দিনে তাদের বিরুদ্ধে জোড়া খুনসহ অসংখ্য খুনের মামলা থাকলেও তারা ছিল অধরা। বিএনপির কোন পদে না থাকলেও মহানগর বিএনপির হাইকমান্ড নাম দিয়ে পৃথক কার্যালয় করে বিএনপি নেতাদেরও চ্যালেঞ্জ ছুড়তো। দীর্ঘদিন ধরেই জিমখানা থেকে বাবুরাইল হয়ে কাশিপুর পর্যন্ত তাদের অঘোষিত সাম্রাজ্য। তাদের এই সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল শহরের মন্ডলপাড়া পুল থেকে শুরু করে জিমখানা, বাবুরাইল, আমবাগান হয়ে কাশিপুর খিলমার্কেট পর্যন্ত। অটোরিকশা ও বেবীট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও তাদের অনুগামীরা নিয়মিত চাঁদাবাজি করতো।

জানা গেছে, জিমখানার ওই অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে ফতুল্লার কাশীপুর খিলমার্কেট, দেওয়ানবাড়ী, ভোলাইল, চরনরসিংপুর, হাটখোলা ও মুক্তারপুর ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত চলাচলকারী কমপক্ষে ২ হাজার ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন নেওয়া হতো ট্রিপপ্রতি ১০ টাকা করে। ভুক্তভোগী ইজিবাইক চালক ও মালিকরা প্রকাশ্যে ওই ২সহোদরের নাম মুখে নিতেও ভয় পান। ওই অবৈধ স্ট্যান্ডের মূল হোতা বিএনপি নেতা ও এম এ মজিদ সেই স্ট্যান্ডের সামনেই চেয়ার নিয়ে বসে থেকে তদারকি করতো। আর এই চাঁদাবাজ চক্রের পেটোয়া বাহিনীর সবাই তার আপন ছোট ভাই হাসান আহম্মেদ এর বাহিনীর লোকজন। শহরের মণ্ডলপাড়া জিমখানা স্ট্যান্ডটি মূলত কাগজে কলমে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড হলেও এখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়া অন্য কোনো গাড়ির দেখা মিলে না। অবৈধ ইজিবাইক স্ট্যান্ডের মূলহোতা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের ইজারাদার বিএনপি নেতা এমএ মজিদ।

জানা গেছে, এই ইজিবাইকের চাঁদাকে কেন্দ্র করেই ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়নের হোসাইনী নগর এলাকায় রাত ৮টায় একটি রিকশা গ্যারেজের ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মিল্টন হাওলাদার (৪০) ও পারভেজ আহমেদ (৩০) নামের দুই ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারগুলো এতটাই ভীত ছিল যে তারা মামলা করতেও সাহস পায়নি। পরে ফতুল্লা থানার এসআই মাজারুল ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১২৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।

তখনকার সময়ের পুলিশের ভাষ্যমতে, নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলার অন্যতম নির্দেশদাতা ছিলেন এই মজিদ আর তার ভাই হাসানও এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত। ওই মামলায় সন্ত্রাসী হাসান গ্রেফতার হয়েছিল। পরে ওই মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন মজিদ। মূলত এই দুইজনের শেল্টারেই চলছে শহরের জিমখানা এলাকার অবৈধ ইজিবাইক স্ট্যান্ডটি। কয়েক বছর ধরেই শহরের জিমখানা এলাকায় ওই অবৈধ স্ট্যান্ডটি চললেও রহস্যজনক কারণে তা উচ্ছেদ করেনি নাসিক কর্তৃপক্ষ।

মামলাটি শুরুতে ডিবি তদন্ত করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে বদলী করা হয়। ৮ম কর্মকর্তা হিসেবে পিবিআইয়ের এস আই শাকিল হোসেন সবশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত কয়েকজনকে অব্যাহিত ও এজাহারের বাইরে থাকা মজিদ সহ ৩জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলা ৩৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

চার্জশীটভুক্তরা হলেন বিএনপি নেতা এম এ মজিদ, এজহারনামীয় আসামী জাহাঙ্গীর বেপারী, বাপ্পি শিকদার, মো. সফিউল আলম রবিন খান, রকি, আমান ভূইয়া, শহিদ, শিপলু, মাহাবুব, হামিম ফয়সাল রাসেল, শরীফ হোসেন, রানা, মানিক মিয়া ওরফে কালা মানিক, ফয়সাল, আক্তারুজ্জামান সোহাগ, রাকিব, মোজাম্মেল হক রাজন, আবুল হোসেন, ফরহাদ এবং সন্ধিগ্ধ আসামী উজ্জল, আবুল হোসেন, আলাল মিয়া, জালাল মিয়া, মনির মিয়া, কেবলা মামুন, নিজাম উদ্দীন ওরফে রুবেল, হান্নান, সোহেল, তৌফিক, হৃদয়, জুম্মন আহম্মেদ, নুরুল ইসলাম দিসনা, শ্যামল, সুজন, মো. ইমরান ওরফে বরিশ্যাইলা ইমরান, ফরিদ।

চার্জশীট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন এজহারনামীয় আসামী আসলাম, মুক্তা, কিরন, রাব্বি, এবং সন্দিগ্ধ আসামী মিলন, পটলা ইমরান, নুরুজ্জামান, মোক্তার, সাদ্দাম, কসাই জাহাঙ্গীর, অটো আলমগীর, তানভীর, জসীম, রেনডোলা, রবিউল, ইমন, সন্ধিদ্ধ আসামী মোঃ সেলিম ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর স্বাভাবিক কারণে মৃত্যুবরন করায়, আসামী মানিক, কামরুল হাসান কিরন, আল সামাদ সবুজ বদু সবুজ, মো. মাসুদুর রহমান আসলাম, হাসানুজ্জামান হাসানের বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার কোন সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া না যাওয়ায় তাদেরকে মামলার দ্বায় হতে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। তবে চার্জশীটে এও উল্লেখ করা হয়, যে সকল আসামীদের সঠিক নাম ঠিকানা পাওয়া যায় নাই অদূর ভবিষ্যতে তাদের সঠিক নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশীট দাখিল করা হবে।

এদিকে আলোচিত সেই হত্যা মামলায় তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই আদালতে চার্জশীট দিলেও ৮ বছরেও বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। বরং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরে জোড়া খুন মামলার আসামীরা এলাকায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে কারণে আলোচিত ওই মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে।  

Islam's Group