রাজনৈতিক নেতাদের ব্যানার ফ্যাস্টুনে সয়লাব হয়ে আছে নারায়ণগঞ্জ নগরী। সদ্য বিদায়ী নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন কর্মসূচির আওতায় নগরীকে ব্যানার ফ্যাস্টুন মুক্ত করার চেষ্টা করলেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অসহযোগিতায় সেটা সম্ভব হয়নি। অভিযান চালিয়ে ট্রাকের পর ট্রাক ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ করা হলেও কিছুদিন পরই আবার ফিরে গিয়েছে সেই পুরনো রূপে। ফলপ্রসূতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও হাল ছেড়ে হয়েছিল।
বিশেষ করে বিএনপি নেতাদের ব্যানার ফ্যাস্টুন-ই বেশি ছিল নগরীর প্রধান সড়ক, বিভিন্ন স্থাপনা সহ পাড়া মহল্লার অলিগলিতে।
এবার সরকারি ভবনের বুকে জায়গা দখল করে নিয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই দলটির মনোনীত প্রার্থীর বিশাল ব্যানার।
নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় শায়েস্তা খান সড়কে নির্মাণ করা হয়েছিলো বহুতল ভবন। নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের আপত্তির মুখে ওই ভবনে চালু করা সম্ভব হয়নি। বিগত সরকারের জনপ্রতিনিধিরা এই ভবনটি ব্যবহারে মৌখিক ভাবে নানান রকম প্রস্তাবনা দিলেও কোন কাজে আসেনি।
সেই ভবনের এক পাশ দখল করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদ্জ্জুামান মাসুদের বিশাল আকৃতির ব্যানার লাগানো হয়েছে। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানার পক্ষ থেকে ওই ব্যানারটি লাগানো হয়েছে। ব্যানারের উপরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি দেওয়া হয়েছে। এরপর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে ধানের শীষে ভোট দিন।
সব শেষ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
সরকারি একটি ভবনে এমন ব্যানার লাগানো নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সমালোচনার জন্ম নিয়েছে। তার মতে পুরো নগরীকে ব্যানার ফ্যাস্টুনে ঢেকে দিয়ে এখন সরকারি ভবন গুলোতেও এমন ব্যানার ফ্যাস্টুনের লাগানো শুরু হয়েছে। এটা কি শুধুই প্রচারণা নাকি ভেতরে অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজার এলাকায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনটির নির্মাণকাজ প্রায় ৭ বছর আগে শেষ হয়েছে। স্থানীয় আইনজীবীদের আপত্তির কারণে ভবনটিতে আদালত বসেনি। ফলে দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ নতুন আটতলা এই ভবনটি প্রাণহীন অবস্থায় পড়ে আছে।
আওয়ামী লীগের আমলে ২০১৬ সালে কালীরবাজারের পুরাতন কোর্ট এলাকায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর আপত্তি জানায় আইনজীবীরা।
জানা যায়, ভবনটি নির্মাণকালে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্রভাবের কারণে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। এই ভবনটি নির্মাণের টেন্ডার পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী এক নেতার ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত ঠিকাদার জাকির।
২০১৮ সালে ভবনটি নির্মাণের পর আইনজীবীরা নতুন ভবনে কোর্ট পরিচালনায় বাধা দেন। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, নারায়ণগঞ্জে জেলা জজ আদালত ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয় ফতুল্লার চাঁদমারীতে অবস্থিত জেলা জজ আদালত ভবনে। জেলা জজ আদালত থেকে নতুন নির্মিত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দূরত্ব কমপক্ষে আড়াই কিলোমিটার। ভবন দু’টি পৃথক স্থানে থাকলে সাড়ে বারশো আইনজীবী ও তাদের সহকারীরা এবং বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হবেন এই দাবিতে জেলা জজ আদালত ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভবন একইস্থানে রাখার জন্য দাবি জানান তারা। পরবর্তীতে আইনজীবীদের দাবির মুখে দুই কোর্ট একস্থানে রাখলেও নবনির্মিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নতুন ৮ তলা ভবন অব্যবহৃত থেকে যায়।








































আপনার মতামত লিখুন :