সিমেন্ট কারখানার ডাস্ট, ফিড (পশুখাদ্য) কারখানার দুর্গন্ধ ও ব্যাটারী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত বিষাক্ত সীসা বন্দরের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। কারণ জনজীবন ও প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপন করা হয়েছে আবাসিক এলাকায়। যেখানে লাখ লাখ মানুষের বসবাস। এখন প্রশ্ন উঠছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কি শুধু মালিকপক্ষের একক চেষ্টাতেই গড়ে উঠছে? নাকি নেপথ্যে আরো কেউ রয়েছে?
তথ্য বলছে, বন্দরের অপরিকল্পিত ও জীবন ধ্বংসকারী কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানই শুধু মালিকপক্ষের চেষ্টায় হয়নি। তাদের পেছনে স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের মদদও ছিলো। এরা সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য জনবসতির পাশে শিল্পকারখানা স্থাপনে মালিকদের সুযোগ করে দিয়েছেন।
কিভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠে জানতে চাইলে সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, এটা শুধু উদ্যোক্তা যে, তার চেষ্টায় গড়ে উঠে তা না। একজন উদ্যোক্তা যেখানে সেখানে প্রতিষ্ঠান করতে চাইতেই পারে। কিন্তু সরকারি একটা নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশন, জনপ্রতিনিধি বা সংসদ সদস্য তাদেরও দেখভালের দায়িত্ব থাকে। বন্দরে যেই বিষয়গুলো হয়েছে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। তারা (শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক) পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিভাবে পায় সেটা হচ্ছে বিষয়। এগুলো হচ্ছে তারা টাকার বিনিময়ে এবং জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে কাজগুলো করে। যার ফলে দেখা যায় এরজন্য ভুক্তভোগী হয় এলাকার মানুষ। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপারে এভাবেই শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ জেলার উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন, যখন বন্দরের শিল্প কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে তখন হয়তো বাড়িঘর ছিলোনা। কল-কারখানাকে কেন্দ্র করে বসতি গড়ে উঠেছে। তবে এখন হয়তো সমস্যা বেশি হচ্ছে বলে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। আমাদের কাছেও একটি অভিযোগ এসেছে আকিজের ফিড কারখানার বিরুদ্ধে। তবে এসব কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে কোনো আর্থিক লেনদেন বা অনিয়ম হয়েছে বলে আমার মনে হয়না। এখন এই কারখানাগুলো বন্ধ করারও কোনো পথ নেই। এটা হলে অনেকের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাবে।
জানা গেছে, বর্তমানে বন্দরের ২৩, ২৪ ও ২৫ নং ওয়ার্ডে একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান সেখানকার বাসিন্দাদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সিমেন্ট কারখানার ডাস্ট, ফিড কারখানার দুর্গন্ধ ও ব্যাটারী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সীসা স্থানীদের স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি করছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা থেকে শুরু করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। অনেকে বাড়িঘর বিক্রি করেও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তাই এর প্রতিকার চেয়েছেন সবাই।
আপনার মতামত লিখুন :