News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই, ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জোড়া খুন ছিল আলোচনায়


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৫, ১০:৪০ পিএম আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জোড়া খুন ছিল আলোচনায়

নানা ঘটন অঘটনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বছরের আরেকটি মাস। জুন মাসে নারায়ণগঞ্জে ঘটেছে নানা নাটকীয় ঘটনা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও ইজিবাইক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্ধে জোড়া খুনের ঘটনা মাসব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। গত ২১ জুন রাতে উপজেলার বন্দর রেললাইন ও পাশের শাহী মসজিদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার প্রয়াত সাদেক আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৭০) এবং পাশের শাহী মসজিদ এলাকার প্রয়াত আব্দুল জলিল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান (৪২)। নিহত কুদ্দুস পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি এবং মেহেদী বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক।

এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬), আলমচানের ছেলে রবিন (২৬) এবং সেলিম চৌধুরীর ছেলে সোহেল চৌধুরী (২৮)। 

জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার ও ইজিবাইক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য (বহিস্কৃত) হান্নান সরকার এবং বিএনপির কিছু নামধারীদের মধ্যে কয়েকমাস ধরেই দ্বন্দ্ধ চলছিল। এদের মধ্যে একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রনি ও জাফর এবং অপর একটি পক্ষের নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান, বাবু সিকদার, বাবু ওরফে জুয়ারি বাবু ও শ্যামল। কয়েকদিন আগে চুরির টিন বিক্রি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। গত শুক্রবারও এ নিয়ে তাদের দুপক্ষের মারামারিতে অন্তত আটজন আহত হন।

এরই জেরে গত শনিবার বিকেলে উভয়পক্ষ শাহী মসজিদ, বন্দর রেললাইন ও হাফেজীবাগ এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেন। রাতে বন্দর রেললাইন এলাকায় আব্দুল কুদ্দুসকে সড়কের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এদিকে আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রনি ও জাফর গ্রæপের লোকজন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসানকে ধরে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় একটি ক্লাবের সামনে নিয়ে গিয়ে তাকে বেধরক মারধর করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার।

এদিকে এ ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারসহ এ পর্যন্ত ১৪জন গ্রেপ্তার রয়েছে বলে জানা গেছে। আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর ঘটনায় তার মেয়ে রোখসানা আক্তার রোববার রাতে বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আর মেহেদী হাসান মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার দুপুরে তার ভাই খালেদ সাইফুল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

রাজমিস্ত্রী আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় (যার নং-৩৯) এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ১৩জনকে আর অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৪০জনকে। এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন, বাবু ওরফে জুয়ারি বাবু, ২২নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার, বাবু শিকদার, জলিল মুন্সীর ছেলে মোস্তফা, লালু বাবুর্চির ছেলে রহিম, চাঁন মোহাম্মদের ছেলে শ্যামল, চুর্ল্লা আলীর ছেলে নাঈম, জুয়ারি বাবুর ছেলে রাতুল ও রাকিব, হান্নান সরকারের ছেলে জুনায়েদ ও ফারদিন, জাহাঙ্গীর ছেলে সিফাত, মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে কানা শহীদ।

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় (যার নং-৪১) এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ২৯ জনকে এবং অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৪০জনকে। এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন, মৃত আব্দুল মালেকের দুই ছেলে জাফর ও রনি, রনির ছেলে রায়হান, ২১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহীন মিয়া , ঝৃষিকেশ মন্ডল মিঠু, মালেকের ছেলে জাহাঙ্গীর, রনির ছেলে আসিফ, নুর গাজীর ছেলে ইমরান, মনিরের ছেলে মুরগী নয়ন, আলম চাঁনের ছেলে রবিন, নান্নু মিয়ার ছেলে শান্ত, মো. সেলিমের ছেলে সোহেল, হিরু মিয়ার ছেলে অনিক ও রবিন, আনারের ছেলে মাশরাফি, বোচা পারভেজ, শুভ, লিখন, পরান, জয়, পিয়াস, সাব্বির, চান্দু, ইব্রাহিম, রুবেল, শ্যামল, মুন্না, আতিক ও সুমন।

দু’টি মামলার এজাহারে বলা হয়, বন্দর রেললাইন, হাফেজীবাগ ও সালেহনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকার, বাবু শিকদার গ্রুপ ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা গ্রুপের জাফর-রনিদের দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্দ্ধ রয়েছে। এ দ্বন্দ্ধে জেরে গত শুক্রবার বন্দর রেললাইন এলাকায় রাস্তার উপর উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পরদিন থানায় একটি মামলাও হয়। এই ঘটনার জেরে শনিবার রাতে মেহেদী ও কুদ্দুস খুন হন বলে উভয় মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

Islam's Group