News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২

৩ বছর পূর্ণ : শাওন হত্যার বিচারের অপেক্ষায় পরিবার


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম ৩ বছর পূর্ণ : শাওন হত্যার বিচারের অপেক্ষায় পরিবার

ছেলে হত্যার পর শাওনের মা ফরিদা বেগম এখনও পাগলপ্রায়। বাইরের মানুষের সাথে তেমন কথা বলেননা বললেই চলে। শাওনের বিষয়ে প্রশ্ন করলেই নীরব হয়ে যান। শুধু মাঝেমধ্যে বলে উঠেন, ‘আমার পোলারে যারা মারছে আল্লাহ ওগো বিচার করবো। আমি ওগো বিচার চাই।’

নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন হত্যার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল বের করার সময়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে প্রাণ হারান তিনি। ঘটনার ২ বছর পর ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর সাবেক এসপি, ডিসি সহ ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে নিহতের বড় ভাই মিলন প্রধান। তবে এই মামলায় গুলি ছোঁড়া আলোচিত এসআই কনক এবং সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনার দিন শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল বের করতে গিয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশ ও বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। সংঘর্ষের মাঝে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন যুবদল কর্মী শাওন। বিএনপির তরফ থেকে দাবী করা হয়, ‘ডিবি পুলিশের ছোঁড়া গুলিতেই নিহত হয়েছে শাওন।  তবে ঘটনার মোড় ঘুরাতে শাওনকে যুবলীগ কর্মী বলে দাবী করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তৎকালীন পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলও গণমাধ্যমের সামনে তাকে যুবলীগ কর্মী বলে পরিচয় দেন। মূলত শাওন ছিলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলীর ভাতিজা।

তবে সেসময় প্রকাশিত মিছিল ও সংঘর্ষের ছবিতে দেখা যায় শাওনকে জেলা যুবদলের বর্তমান আহবায়ক সাদেকুর রহমান সাদেকের সাথে মিছিল করতে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে। ঘটনার পরপরেই দায়ের করা মামলায়  বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় বাদী দেখানো হয় শাওনের বড়ভাই মিলন প্রধানকে।

কিন্তু এই মামলা তিনি করেননি বলে জানান মিলন প্রধান। তিনি বলেন, ‘সেদিন দুপুর দেড়টা থেকে রাত সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত আমাকে পুলিশ ঘিরে রেখেছি। আমার তখন চিন্তা ছিলো যে ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আমাকে সাদা কাগজে স করতে বলেছে, তাই করে দিয়েছে। শাওন যুবদল করতো এটা স্পষ্ট। ওর মৃত্যুর পরে আওয়ামী লীগের লোকজন এসে আমাদের অফার দিয়েছে আমরা যেন তাদের পক্ষ নেই। পুরো ফ্যামিলি বিদেশ পাঠায়া দিবে, ব্যবসা বাণিজ্য করতে দিবে, কেউ বাধা দিবে না। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু আমরা ভাইয়ের রক্তের সাথে বেঈমানি করতে পারবো না।’

এদিকে ৫ আগস্টের পর পুরোনো মামলা বাতিল করে নতুন করে মামলা দায়ের করেন মিলন প্রধান। মামলায় আসামী করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল, সাবেক ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ, সদর থানার সাবেক ওসি আনিচুর রহমান, ডিবি পুলিশের এসআই মাহফুজুর রহমান কনক সহ ৫২ জনকে। তবে এই মামলায় এখন পর্যন্ত আলোচিত আসামীদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও এসআই কনককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘শাওন হত্যা আমাদের নারায়ণগঞ্জে বিএনপির জন্য দুঃখজনক একটি দিন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মত আনন্দের দিনটি বিষাদময় করে দিয়ে গেছে হাসিনা সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী। আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই। শাওনের পরিবারের পাশে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছে। তাদের যখন যা লাগে দল থেকে সেই বিষয়ে অবগত থাকা হয়।’

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, ‘এই মামলাটি আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছি। এই পর্যন্ত মামলার আসামী এসআই কনক ও গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অধিকাংশ আসামী আত্মগোপনে ও কেউ কেউ দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের তদন্তকাজ চলমান আছে। তদন্তসাপেক্ষে সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Islam's Group