নেই মা-বাবা; নেই কোনো ভাইবোন; নেই কোনো সন্তান। সেই সাথে জীবনের প্রায় ১১০ টি বছর অতিক্রম করেছেন। তারপরও তিনি তার বয়সের কাছ হার মানছেন না। তিনি একা একাই বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাও আবার কারও কোনো রকম সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া। তিনি নিজে একাই কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমনই একজন সংগ্রামী নারী হচ্ছেন ফজিলাতুন্নেছা।
ফজিলাতুন্নেছা নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকার আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার চত্বরের পাশে আমড়া, জাম্বুরা ও শসা সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল বিক্রি করে নির্বাহ করে থাকেন। তার দেহে শক্তি নেই, চোখে কম দেখেন, কানে কম শোনেন তবুও প্রতিদিন সকালে উঠে নিয়ম করে বেরিয়ে পড়েন এই জীবিকার সন্ধানে।
প্রতিদিন ভোরবেলা নিজেই হেঁটে যান শহরের দিগুবাবুর বাজারে, সেখান থেকে সংগ্রহ করেন হাজার টাকার পণ্য। দিনের শেষে তার আয় হয় মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা। আর এই আয় দিয়েই চলে যায় ফজিলাতুন্নেছার একাকী জীবন। ফজিলাতুন্নেছা দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার খানকা গলির এক বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। তিনি পাকিস্তান আমল থেকেই এই নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার কাছে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি ফজিলাতুন্নেছাকে সহযোগিতা করতে চাইলে তিনি বলে দেন তার কোনো সহযোগিতায়র প্রয়োজন নেই। তারপরও উপহার সামগ্রী হিসেবে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, পিঁয়াজ, আলু, কেক, বিস্কিট, রুটি, নুডুলস ও গৃহস্থালি বিছানার চাদর, পরনের নতুন কাপড় এবং তার ব্যবসার পুঁজি বৃদ্ধির জন্য কিছু অর্থ উপহার প্রদান করা হয়।
উপহারসামগ্রী পেয়ে ফজিলাতুন্নেছা বলে বলেন, আমি খুশি হয়েছি। ডিসি আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া করি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ফজিলাতুন্নেসা একজন বৃদ্ধ মহিলা। তিনি কয়েক দশক যাবত আমড়া, জাম্বুরা ও শসা সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল বিক্রি করে নির্বাহ করে থাকেন। আমরা আমাদের মায়েদের যেমন দেখেছি তাদের যে আত্মসম্মানবোধ ছিলো ফজিলাতুন্নেসার মধ্যেও এরকম আত্মসম্মানবোধ দেখেছি। আমি তার কথা শুনে অবাক হয়েছি। আমি আসার সাথে সাথে বলছিলো আমি কাজ করে খাবো। আমি কারও কাছে সাহায্য সহযোগিতা চাই না।
তিনি আরও বলেন, আমি তার আত্মসম্মানকে সম্মান জানাই। তিনি জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন কিন্তু তারপরও আত্মসম্মান ধরে রেখেছে। ফজিলাতুন্নেসা যেভাবে নিজের আত্মসম্মান ধরে রেখেছে আমরা যদি তার আত্মসম্মান রেখে চলি তাহলে সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যেই তার বয়স্কভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) নাঈমা ইসলাম ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সরদার সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
আপনার মতামত লিখুন :