নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকার এক অসহায় পরিবারের উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আতা-ই রাব্বি ও তার পিতা কৃষকদল নেতা শাহাদাত চৌধুরী ওরফে শাহাদাত পুলিশ। এই পিতা-পুত্রের অত্যাচারের বর্ণনা সিনেমাকেও হার মানাবে। ভুক্তভোগী পরিবার প্রশাসনের দারস্থ হওয়া সত্বেও সন্ত্রাসীদের থেকে মুক্তি মেলেনি, বরং প্রতিনিয়ত মৃত্যু ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। নিজ সম্পদ রক্ষায় প্রায় ২০ দিন ধরে আলো বাতাসহীন একটি কারখানায় আবদ্ধ রয়েছেন।
ফতুল্লার গিরিধারা এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা বেগম (৫৫)। নিজের স্বামী খায়রুল বাসারের প্রবাস জীবনে উপার্জনের অর্থ দ্বারা ওই এলাকায় ২০১২ সালে তিন কাঠা জমি ক্রয় করেছেন। ক্রয়কৃত জমিতে তারা বহুবছর ধরে একটি কারখানা ভাড়া দিয়ে অর্থ ভোগ করে গেলেও গত ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পরবর্তীতে জমিটিতে দখলদাররে হানা পড়ে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন ঘটলেও গিরিধারায় নব্য স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন। এই নব্য স্বৈরাচার হলেন বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষকদল নেতা ভূমিদস্যু শাহজাহান চৌধুরী ওরফে পুলিশ শাহজাহান। এই সন্ত্রাসীর আরেকটা পরিচয় হচ্ছে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আতাই-রাব্বির বাবা। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে গিরিধারা এলাকার অঘোষিত রাজা হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ভূমিদস্যু শাহজাহানের নজর পড়েছে অসহায় তাসলিমার মাত্র তিন কাঠা সম্পদের উপর যা দখল নিতে এহেন কোনো নিকৃষ্ট কর্মকান্ড নেই যা তিনি করেনি। পরিবারটির উপর হামলা-মামলায় চালানো হয়েছে নিষ্ঠুর নির্যাতন। সবশেষ গেলো তিন সপ্তাহ ধরে চালানো নির্যাতন তো সিনেমাকেও হার মানিয়েছে। যা কোনো মনুষত্ববান ব্যক্তি দ্বারা সম্ভব নয়। ভুক্তভোগীদের খোদ নিজের কারখানাতেই বন্দী করে রাখা হয়েছে, এবং খাবার দেওয়া হয়নি। এদিকে কারখানাটির বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সকল লাইন কেটে দেন এই সন্ত্রাসী। ফলে আলোবাতাস ছাড়াই মানুষগুলো অবস্থান করছেন।
ভুক্তভোগী তাসলিমা জানিয়েছেন তিনি এবং তার মেয়ে ফাহিমাকে বিশদিন ধরে কারখানা বন্দী রাখা হয়েছে। এরমধ্যে তিনদিন না খাইয়েও রাখা হয়।
তাসলিমা বলেন, আওয়ামী লীগের পতনের পরে আমাদের জমি দখলের জন্য বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে শাহাদাত পুলিশ। তিনি বিএনপির বড় নেতা হওয়ায় তাকে কেউ কিছু বলার সাহস করেনা। দখল নেওয়ার জন্য সে আমার ছেলেকে বৈষম্যবিরোধী মিথ্যা মামলায় আসামি করে এলাকা ছাড়া করেছে। যাতে আমাদের বাসায় কোনো পুরুষ না থাকলে সহজে দখল নিতে পারেন।
এই ভুক্তভোগী বলে, আমার জমিতে কারখানা ভাড়া দেওয়া ছিল। কারখানা মালিককে শাহাদাত মারধর করে তার সকল মালপত্র লুট করে নিয়ে যান। ওই লোককে উঠানোর পরই আমাদের কারখানা দখল নেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা খবর পেয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হই। এরপর থেকে আমাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো শুরু হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়াও হয়েছে। আমাকে মারধর করা হয়। আমরা এই বিষয়ে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ জানালেও এই সন্ত্রাসী কাউকে তোয়াক্কা করছে না।
তাসলিমার মেয়ে ফাহিমা জানান, আমরা এই কারখানা বাবদ ৩২ হাজার টাকা পেতাম। শাহাদাত আমাদের ভাড়াটিয়াকে মারধর করে জোরপূর্বক উঠিয়ে দিয়েছেন। এরমধ্যে আমাদের কারখানার তিনটি গ্যাস লাইন এবং বিদ্যুৎ লাইন কেটে ফেলেছেন। উনি আমাদের বিশদিন ধরে আলোবাতাসহীন এই কারখানায় বন্দী করে রেখেছেন। দিবারাত্রি হত্যার হুমকি দেন। সারাক্ষণ আমাদের আশপাশে উনার লোকজন ঘুরাঘুরি করে। আমাদের তিনদিন না খায়িয়ে রেখেছেন। আমরা কার কাছে গেলে মুক্তি পাবো একমাত্র আল্লাহ পাক জানেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শাহাদাত নামক এই জুলুমবাজের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা কম রয়েছে। শুধু তাসলিমাই নয় ওই এলাকার বহু পরিবারকে এভাবেই জিম্মি করে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার জানান, শাহাদাতের সঙ্গে আওয়ামী নেতা রাজ্জাক ব্যাপারীর বোনের জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে। আওয়ামী লীগ আমলে তারা দখল নিয়েছিল আর বর্তমানে শাহাদাতের সঙ্গে নাকি সমস্যা চলছে। এটা জমিজমার বিষয়। এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহাদাত হোসেনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। ৮ নভেম্বর কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল ওই সিদ্ধান্ত দেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর বিকেলে ফতুল্লার গিরিধারা এলাকায় তিন সংবাদকর্মীকে দুই ঘন্টা আটকে মারধর করা হয়। এসময় হামলা চালিয়ে ক্যামেরা ও মুঠোফোন ভাঙচুর করা হয়।
৬ নভেম্বর বিকেলে আহত জাগো নিউজের সাংবাদিক মো. আকাশ খান বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে মূল হামলাকারী শাহাদাত হোসেন (৬০) এবং সায়েদাবাদী শহীদকে (৫৫)। এছাড়া মামলায় ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, শাহাদাত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আতা-ই রাব্বির বাবা।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আদালতে প্রেরণ করা হলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুদ্দিন কাদিরের আদালত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করে তাকে কারাগার প্রেরণের নির্দেশ দেন।








































আপনার মতামত লিখুন :